Saturday, August 13, 2022

গাজীপুরে হিজড়া বানানোর সিন্ডিকেট!

গত ১০ বছর আগেও সমাজের সবার মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন আসাদুল। তার মধ্যে ছিল মেয়েলি ভাব।

তখন তিনি আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। হঠাৎ হিজড়াদের প্রলোভনে সার্জারি করে ছেলে থেকে হিজড়া বানানো হয় আসাদুলকে। লিঙ্গ পরিবর্তনের মাধ্যমে আসাদুল হয়ে যান টাপুর (৩০)।
টাঙ্গাইলের মধুপুর থানা এলাকার আসাদুল ওরফে টাপুর এভাবেই তার হিজড়া হওয়ার গল্প বলেন। তিনি এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান।  

বাবু ওরফে কাজল ও শহীদ হিজড়া সিন্ডিকেট প্রলোভন এবং ভয় ভীতি দেখিয়ে আসাদুলের মতো আরও অনেক ছেলেকেই লিঙ্গ পরিবর্তন করে হিজড়া বানিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইল মধ্যপাড়া বাঁশতলা হিজড়া পট্টির হিজড়াদের। তারা সবাই স্বাভাবিক জিবনে ফিরতে আকুতি জানিয়েছেন।

বাইমাইল মধ্যপাড়া বাঁশতলা হিজড়া পট্টির হিজড়ারা জানান, বাবু ওরফে কাজল, শহীদ, মৌসুমী, লতা ও আপন তারা সবাই হিজড়া। তারা হিজড়াদের সরদার। তাদের রয়েছে ছেলে থেকে হিজড়া বানানোর ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেট। গত কয়েক বছরে ৩০ থেকে ৪০ জন ছেলেকে হিজড়াতে রূপান্তরিত করে এ সিন্ডিকেট। মেয়েলি স্বভাবের ও দেহের গঠন মেয়েলি, চলাফেরাও মেয়েদের মতো এমন ছেলেদের টার্গেট করে টাকার লোভ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়া বানায় ওই সিন্ডিকেট। ছোটবেলায় তাদের রাখা নামও পরিবর্তন করে দেয় এ সিন্ডিকেট। পরে তারা বাবা-মা ও স্বজনদের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। প্রলোভন ও ভয়ভীতির শিকার হয়ে তারা সব ফেলে পাড়ি জমায় অন্য এক জগতে।

এসব হিজড়াদের দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, জুলুম ও অত্যাচার করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন হিজড়াদের ওই সিন্ডিকেট। এভাবেই সিন্ডিকেটটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। অনেক হিজড়া সর্দার লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বহুতল বাড়ি।  

বাইমাইল হিজড়া পট্টিতে বসবাস করছেন প্রায় ৩০ জন হিজড়া। তারা সবাই এখন ফিরতে চান স্বাভাবিক জীবনে। এছাড়াও কোনাবাড়ীর আমবাগ, কাশিমপুর, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা ও বোর্ডবাজার এলাকায় রয়েছে অনেক হিজড়া। এসব হিজড়াদের মধ্যে অনেকেই ছেলে। তারা অপারেশন ছাড়াই শাড়ি পরে হিজড়ার ছদ্মবেশ নিয়ে মানুষকে অত্যাচার করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।  

রানা মিয়া ওরফে তমা (২৬) বলেন, তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে। জন্মের পর বাবা-মা তার নাম রাখেন রানা মিয়া। তিনি ছিলেন ছেলে। তবে তার মধ্যে ছিল মেয়েলি ভাব। তিনি গাজীপুরের কোনাবাড়ী এসেছিলেন লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরি করতে। এক পর্যায়ে বাবু ওরফে কাজল ও শহীদ হিজড়ার শিষ্যরা টাকা তুলতে এসে আমাকে দেখতে পান। পরে আমার বাসায় এসে অত্যাচার, জুলুম, লোভ-লালসা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সঙ্গে করে আমাকে নিয়ে যান।  

তিনি বলেন, আমি এখন তৃতীয় লিঙ্গের সঙ্গে চলাফেরা করি সে কারণে পরিবারের সদস্যের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারি না। লোকে নানান কথা বলে। তারা জোরপূর্বক আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। বাবা-মায়ের কাছ থেকে আমাকে বঞ্চিত করে রেখেছে। আমি আর এই পথে থাকতে চাই না। ছোটখাটো একটা চাকরি করে চলতে চাই। আগের জীবনে ফিরে যেতে না পারলেও স্বাভাবিক জীবন নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলতে চাই। আমাদের হাত-পা সুস্থ আছে কর্ম করে খাওয়ার মতো অবস্থা আছে। আমি বর্তমানে বগুড়া আজিজুল হক সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের অধ্যায়রত আছি।  

গার্মেন্টসে চাকরি করে শ্রমিকরা অল্প টাকা বেতন পেয়ে ঘর ভাড়া দিয়েও সংসার চালান। অনেক কষ্টে তারা চলেন। আমরা তাদের টাকায় ভাগ বসাই। আমরা আর এসব নোংরা কাজ করতে চাই না।  

সুজন ওরফে কারিনা জানান, গত পাঁচ বছর আগে কোনাবাড়ীর একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন সুজন। ছোট বেলা থেকেই তার মধ্যে ছিল মেয়েলি ভাব। সুজনকে দেখিয়ে স্থানীয় লোকজন হিজড়াদের বলতো সুজন চাকরি করেন। তোমরা হিজড়ারাও তো চাকরি করে চলতে পারো। এ কথার জের ধরে হিজড়ারা জোর করে আমাকে তুলে নিয়ে লিঙ্গ পরিবর্তন করে হিজড়া বানিয়ে দেন।

টুসু হিজড়া বলেন, আমরা স্বাভাবিক জীবনের ফিরে যেতে চাই। সরকার আমাদের ছোটখাটো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিক এটা আমাদের দাবি। আমরা কাজ করে খেতে চাই। বাবু ওরফে কাজল, শহীদ, মৌসুমী, লতা ও আপন হিজড়াদের বিরুদ্ধে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এবং জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। তারা আমার মতো ৩০ থেকে ৪০ জনকে অপারেশনের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করে ছেলে থেকে হিজড়া বানিয়েছে। এছাড়া তারা আমাদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর আগে এ বিষয়ে কোনাবাড়ী থানায় অভিযোগ করেছিলাম।

বাবু মিয়া হিজড়া বলেন, কালু ওরফে শিল্পী আমার লিঙ্গ পরিবর্তন করতে বলেন। আমি তার কথা শুনিনি বলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি প্রয়োজনে আদালতে যাবো তার নামে মামলা করবো। কালু হিজড়ার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। আমারও স্ত্রী সন্তান রয়েছে। আমি লিঙ্গ পরিবর্তন করিনি।  

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, অনেক আগে হিজড়ারা টাকা পাওয়ার বিষয় নিয়ে একটি অভিযোগ করেছিলেন। তবে জোরপূর্বক লিঙ্গ পরিবর্তন করে কাউকে হিজড়া বানানো অভিযোগ পাইনি।  

গাজীপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম বলেন, এ ঘটনায় আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। তাছাড়া এমন ঘটনা পুলিশ দেখবে। তারা যদি কর্মসংস্থানের জন্য ট্রেনিং করতে চায় আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।

এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের সহকারী কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ দেবে শুনেছি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


https://www.gazipurkotha.com/out-ofcity/news/63386


============================================================ Advocate Shahanur Islam | An Young, Ascendant, Dedicated Human Rights Defender, Lawyer and Blogger in Bangladesh, Fighting for Ensuring Human Rights, Rule of Law, Good Governance, Peace and Social Justice For the Victim of Torture, Extra Judicial Killing, Force Disappearance, Trafficking in Persons including Ethnic, Religious, Sexual and Social Minority People.

No comments:

Post a Comment