Wednesday, June 1, 2022

বগুরায় যৌন সংখ্যালঘু রপান্তরকামী হোচিমিন ইসলামের পরিবারকে একঘরে করে রাখায় জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশের উদ্বেগ ও প্রতিবাদ।

বগুরায় যৌন সংখ্যালঘু রুপান্তরকামী সম্প্রদায়ের ব্যক্তি হোচিমিন ইসলামের পরিবারকে গত দুইমাস যাবত একঘরে করে রাখার ঘটনায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

একই সাথে উল্লেখিত মানবাধিকার লংঘনের মত ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করত দ্রুত নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বিচারে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জোড় দাবী করেছে জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ।

গত ১জুন ২০২২ তারিখে ঢাকা ট্রিবিয়্যুন প্রত্রিকার অনলাইন ভার্ষনে প্রকাশিত “দুই মাস ধরে ‌‘একঘরে’ বগুড়ার ট্রান্সজেন্ডার নারী হোচিমিনের পরিবার” শীর্ষক খবর হতে জানা যায় বগুড়ায় দুই মাস ধরে হোচিমিন ইসলাম নামে এক ট্রান্সজেন্ডার (রূপান্তরিত) নারীর পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো কারণে আরও চার পরিবারকে একঘরে রেখেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। গত মার্চের শেষে সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনার সূত্রপাত।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হোচিমিন ইসলাম বগুড়া সদরের নিশিন্দারা ইউনিয়নের বারোপুর তালুকদারপাড়ায় মৃত নজরুল ইসলামের মেয়ে। তিনি ঢাকায় চাকরি করেন। বাড়িতে তার মা রেহেনা খাতুন ও বোন নিলুফা ইয়াসমিন থাকেন। ২০২০ সালে স্বেচ্ছায় হোচিমিন ট্রান্সজেন্ডারে রূপান্তরিত হন। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামবাসী তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে শুরু করে।

হোচিমিন জানান, তিনি ভারতে গিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নারীতে রূপান্তরিত হন। কিছুদিন আগে চাচা রেজাউল করিম হোচিমিনের মায়ের কাছে দাবি করেন, তার দুই সন্তানই মেয়ে হওয়ায় তারা আইন অনুসারে ভাইয়ের অর্থাৎ হোচিমিনের বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবেন। এ নিয়ে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে তার বৈঠকও হয়েছে।

কিন্তু তার দাবি অনুযায়ী জমির ভাগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে রেজাউল করিম হোচিমিনদের একঘরে করে রাখার পরিকল্পনা করেন। পাশাপাশি তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে শুরু করেন। বাধ্য হয়ে তিনি (হোচিমিন) সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত ১৩ মার্চ থানায় তাদের ডেকে আপস করে দেওয়া হয়।

তবে থানায় ডাকার বিষয়টি রেজাউল করিম ভালোভাবে নেননি। এ ঘটনায় তিনি হোচিমিনের পরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ হন।

গত শব-ই-বরাতের রাতে তিনি তার পক্ষের লোকজনকে বাড়িতে ডাকেন। সেখানে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় গ্রামের কেউ হোচিমিনের পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা ও কথা বলতে পারবে না। ওই আলোচনায় হোচিমিনের চাচা রেজাউল করিম ছাড়াও নিশিন্দারা ইউনিয়নের সাবেক সদস্য আহসান হাবিব হারুন, রাহিজুল ইসলাম তালুকদার, খায়রুল ইসলাম, শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। হোচিমিন ঢাকা থেকে জরুরি সহায়তা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তখন অভিযুক্তরা সরে পড়েন।

“যেসব প্রতিবেশী এ ষড়যন্ত্রে জড়িতে তারা আমাদের গালিগালাজ ও এ ঘটনায় হোচিমিনকে দোষারোপ করে। তারা আমাদের বাচ্চাদের সঙ্গে তাদের সন্তানদের মেলামেশা ও খেলতে দেয় না। পাড়ার দুটি দোকান তাদের কাছে কিছু বিক্রি করে না। বাধ্য হয়ে কেনাকাটার জন্য ৪-৫ কিলোমিটার দূরের ঘোড়াধাপ হাট বা শহরের বাজারে যেতে হয়।”

তিনি আরও বলেন, “মাতবরদের কথা অমান্য করে আতাউর রহমান, শাহজাহান আলী তালুকদার, লুৎফর রহমান, ইমরুল হোসেন ও তাদের পরিবার আমাদের সঙ্গে মেলামেশা করায় তাদেরও একঘরে করা হয়েছে। বর্তমানে মাতবররা হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে আতঙ্কিত। পুলিশের পরামর্শে আবারও থানায় জিডি করেছি। গত ১১ মে পুলিশ দুই পক্ষকে থানায় ডেকে আপস করে দেয়। কিন্তু এলাকায় ফিরে প্রভাবশালী মাতবররা আবার আগের মতো আচরণ করতে থাকেন।”

হোচিমিনদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে মাতবরদের রোষানলে পড়া ইমরুল হোসেনের স্ত্রী নাদিয়া জানান, থানায় আপসের পরদিন তাদের বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশনের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আতাউর নামের বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও পরে ঠিক করা হয়েছে।

আরেক ভুক্তভোগী শাহজাহান আলী তালুকদারের অভিযোগ, “হোচিমিন নারীতে রূপান্তর হওয়াকে কেন্দ্র করে এসব সমস্যা হয়েছে। ওই পরিবারকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। আর এসবের মূলহোতা হলেন হোচিমিনের চাচা রেজাউল করিম। পরবর্তীতে রেজাউল কিছুটা থামলেও হারুন, রাহিজুল, খায়রুলরা ওদের হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন।”


হোচিমিনের প্রতিবেশি শাহজাহান আলী জানান, ওই পরিবারের পক্ষে কথা বলায় তাকে একঘরে করা হয়েছে। দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্র বেচা-কেনায় নিষেধ করা হয়েছে।

জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর প্রতিষ্টাতা মহাসচিব ও বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত বগুরায় রুপান্তরকামী নারি হোচিমিন ইসলামের পরিবারকে এক ঘরে করে রাখার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং অবিলম্বে উক্ত ঘটনার দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক দায়ীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবী জানিয়েছে।

একই সাথে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে উপযূক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও সামাজিকভাবে পূনর্বাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানিয়েছে অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত।

অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত মনে করেন যৌন সংখ্যালঘু রুপান্তরকামী নারীর জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে তার পরিবারকে একঘরে করে রাখার ঘটনা মৌলিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন এবং উক্ত ঘটনা প্রমান করে যৌন সংখ্যালঘু রুপান্তরকামী নারীরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের নিকট কতটা বৈষম্যের শিকার হোন।

যৌন সংখ্যালঘু রুপান্তরকামী নারীর জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে তার পরিবারকে একঘরে করে রাখার ঘটনা বাংলাদেশে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং যৌন সংখ্যলঘুর প্রতি প্রতি সংঘটিত বৈষম্য, নির্যাতন, সামজিক বয়কট, সহিংসতার একটি ক্ষুদ্র অংশ বলে অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম মনে করে।

অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত অবিলম্বে রুপান্তরকামীসহ যৌন সংখ্যালঘু সমকামী স্মপ্রদায়কে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধার বিলোপপূর্বক যৌন সংখ্যালঘু অধিকার ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের জোড় দাবী জানিয়েছেন।

============================================================ Advocate Shahanur Islam | An Young, Ascendant, Dedicated Human Rights Defender, Lawyer and Blogger in Bangladesh, Fighting for Ensuring Human Rights, Rule of Law, Good Governance, Peace and Social Justice For the Victim of Torture, Extra Judicial Killing, Force Disappearance, Trafficking in Persons including Ethnic, Religious, Sexual and Social Minority People.

No comments:

Post a Comment