Sunday, February 13, 2022

সবাই গালি দেয়, ভিক্ষা না করলে খাব কী?

রাজধানীর বেশির ভাগ ট্রাফিক সিগন্যালে তৃতীয় লিঙ্গের কয়েক জনকে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে কথা হয় রাজধানীর বিজয় সরণি, বাংলামোটর, গুলিস্তান ও কাকরাইলের মোড়ে ভিক্ষা করতে আসা কয়েক জনের সঙ্গে। তারা বলেন, অন্য ১০ জন সাধারণ মানুষের মতোই আমাদের জন্ম। কিন্তু তারপরও সবাই গালি দেয়, লাথি মারাসহ নানাভাবে নির্যাতন করে। আমাদের মানুষই ভাবে না। ভিক্ষা না করলে আমরা খাব কী? বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করেই জীবন চালাই। অপমান-বৈষম্য-লাঞ্ছনার তিক্ততার মধ্যেই যাপিত হচ্ছে জীবন।

দেশে কত জন হিজড়া আছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। সরকারি হিসেবে দেশে ২০ হাজার হিজড়া রয়েছে। আবার বেসরকারি হিসেবে দেশে ২ লাখ থেকে ৫ লাখ হিজড়া রয়েছে। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, ক্রোমোজমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্মের পর লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়, তারাই হিজড়া। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের রাষ্ট্রের সব নাগরিকের মতো বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। এ জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজ যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে আসছে, তা অন্যায় ও অন্যাঘ্য। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো নিজেদের দোষে বা ইচ্ছায় তৃতীয় লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে (হিজড়া) মূলধারায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, যা প্রশংসনীয়। ভোটার তালিকায় হিজড়া হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যোসাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ১৯৯৬ সাল থেকে হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছে। হিজড়াদের জীবন-মান উন্নয়নে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনে একটি প্রকল্প রয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো হিজড়াদের পরিসংখ্যানের কাজ করছে।

ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় হিজড়া মৌ-এর সঙ্গে। উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরে জন্ম নেওয়া মৌ নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় শরীরে পরিবর্তন দেখতে পান। তার মেয়েলি ভাব বাবা-মা বুঝতে পারেন। তিনি বলেন, তার স্বপ্ন ছিল মানুষের জন্য কিছু করার। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেস্তে যায় নবম শ্রেণিতে যখন উঠি। তখন তিনি শারীরিক পরিবর্তন উপলব্ধি করেন। 

পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কটূক্তি ও কটুদৃষ্টির শিকার হতে হয় তার। ভাইবোন, সহপাঠী ও বন্ধুরা তার সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। নির্যাতন শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তাই নয় ঘর ছাড়তে হয় মৌকে। ঢাকায় চলে আসে। সায়েদাবাদে এক হিজড়া গুরুর কাছে যায় এবং তিনি তাকে ভিক্ষার কাজ দেন। এখন গুলিস্তান এলাকায় প্রতিদিন ভিক্ষা করা, মানুষের কাছে সাহায্য চাওয়াই তার কাজ। মৌ বলেন, আমার কী দোষ? কেউ আমাদের স্বীকৃতি দিতে চায় না। মারধর করে। ভিক্ষা করে যে টাকা পাই, সব টাকা হিজড়া গুরুর কাছে জমা দেই। আর উনি আমার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

একই ধরনের করুন কাহিনী শোনালেন হিজড়া সুমি। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। বাবা-মায়ের সবচেয়ে আদরের মেয়ে ছিলেন। কিন্তু সেই আদর বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। যখন ক্লাস সেভেনে উঠেন, তখন শরীরে পরিবর্তন দেখতে পান। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে মারধর করেন। মা-বাবার কাছ থেকে তাকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। এরপরই স্বেচ্ছায় বাসা থেকে চলে যান। এখন পান্থপথ, ফার্মগেট ও বিজয় সরণি এলাকায় ভিক্ষা করে তার জীবন চলে। 

সুমি বলেন, আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়। যেকোনো পরিবারেই তো হিজড়া জন্ম নিতে পারে। এতে আমাদের দোষ কোথায়? প্রথমে বিভিন্ন অফিসে ও বাসে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা উঠাতাম। কিন্তু তারা এখন আর সেভাবে টাকা দিতে চায় না। বিভিন্ন অফিসে গেলেও সেভাবে সাড়া পাওয়া যায় না। এ জন্য আমরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভিক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে দেশের দুই জন বিশিষ্ট গাইনি বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডা. পারভীন ফাতেমা ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগমের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিনিধির। 

তারা বলেন, জন্মগত ত্রুটির কারণে হিজড়া হয়। অন্যান্য সন্তানদের মতোই তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা উচিত। কখনোই খারাপ ব্যবহার করা উচিত না। হিজড়ারা শিক্ষা-দীক্ষায় ভালো। সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি হলে দেশের উন্নয়নে তারাও সম্পৃক্ত হতে পারে। তাদের সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। 

বর্তমান সরকার হিজড়াদের পুনর্বাসনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি সাধুবাদ জানাই। পিতা-মাতার অন্যান্য সন্তানদের মতো তাদেরকে দেখা উচিত। হিজড়া হওয়া তার অপরাধ নয়। ধনী-গরিব যে কোন পরিবারে তার জন্ম হতে পারে। সমাজ যেন হিজড়াদের উপর মানসিক নির্যাতন না করে সেই ব্যাপারে সবার এগিয়ে সচেতন হতে হবে।

https://www.ittefaq.com.bd/490001/%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A7%9F-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%AC-%E0%A6%95%E0%A7%80



============================================================ Advocate Shahanur Islam | An Young, Ascendant, Dedicated Human Rights Defender, Lawyer and Blogger in Bangladesh, Fighting for Ensuring Human Rights, Rule of Law, Good Governance, Peace and Social Justice For the Victim of Torture, Extra Judicial Killing, Force Disappearance, Trafficking in Persons including Ethnic, Religious, Sexual and Social Minority People.

No comments:

Post a Comment