বাংলাদেশ হিজড়া কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবিদা সুলতানা মিতু (৪৩)। নারী হয়েও হিজড়া সেজে রাজধানীর ১১ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সরকারি ভবন দখল করে খোলা এই ফাউন্ডেশনের নাম ব্যবহার করে ভয়ঙ্কর ফাঁদ পেতেছেন মিতু।
জোর করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে কার্যালয়ে ধরে এনে মারধর, বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, ব্ল্যাকমেইলিং করে অর্থ আদায়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পর্ষদে পদ দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এসপিসিতে যোগদান করলেই টাকা পাওয়া যাবে প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকশ মানুষকে নিয়ে নিঃস্ব করা, বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য, পাওনাদারদের তুলে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যার হুমকি এবং পুরনো পয়সা ও ম্যাগনেট পিলার বিদেশে বিক্রির নামেও বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে এই মিতুর বিরুদ্ধে। সময়ের আলোর অনুসন্ধানে হিজড়া রানী মিতুর চাঞ্চল্যকর প্রতারণা, ধান্দাবাজি ও অর্থ কামাইয়ের বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
মিতুর যত ভয়ঙ্কর ফাঁদ : অনুসন্ধানে জানা গেছে, হিজড়া মিতু হিজড়া কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ভবনকে কেন্দ্র করে সব অপকর্ম চালাত। বিভিন্ন ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের পর ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় করত। তেমনই একজন ভুক্তভোগী রাজধানীর জামাল হোসেন। মিতুর এক অনুষ্ঠানে ফুল সরবরাহ করতে গিয়ে পেশায় ফুল ব্যবসায়ী জামালের পরিচয়। বছরখানেক আগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এসপিসিতে আইডি কিনলে টাকা উপার্জন করা যাবে বলে জামালকে প্রলোভন দেখায় মিতু। এরপর তার কথামতো ৫২টি আইডি কেনেন জামাল। পরে আইডিতে আসা ২৬ হাজার টাকা চাইতে গেলে গত আগস্ট মাসে তাকে বাংলামোটর থেকে জোর করে তুলে নেওয়া হয় মিতুর কার্যালয়ে। এরপর মারধর করে জামালকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে তার কাছে থাকা একটি দামি মোবাইল ও ২৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় মিতু ও তার সহযোগীরা। এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করলে তদন্ত শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত সোমবার মিতুকে বেইলি রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। সেই মামলায় মিতু এখন কারাগারে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের উত্তরের অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের এসআই জামাল উদ্দিন বলেন, মিতু এক ভয়ঙ্কর প্রতারক। জামাল নামে একজনকে সে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর ধরে, ভিডিও ধারণের পর টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনার সত্যতাও মিতু স্বীকার করেছে। এ ছাড়াও পিবিআইয়ের ঢাকা উত্তরের অর্গানাইজড ক্রাইমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরোয়ার জাহান সময়ের আলোকে বলেন, মিতুকে সাইবার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। সে হিজড়াদের নেতা কি না বিষয়টি জানা নেই। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। শুধু ব্যবসায়ী জামালই নয়, এর আগেও বঙ্গ মার্কেটের এক ব্যবসায়ীকে তার ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কার্যালয়ে তুলে এনে মারধরের পর ৮ লাখ টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয় মিতু। যদিও ওই ব্যবসায়ী লজ্জায় সে তথ্য প্রকাশ করেননি।
বেবিচক পর্ষদে পদ দেওয়ার নামে প্রতারণা : বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিম্মি করে ডেকে নিয়ে মারধর ও অর্থ আদায় ছাড়াও অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এই মিতু বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পর্ষদ কমিটিতে পদ দেওয়ার নামেও অন্তত ২১ জন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাদের কাছ থেকে ৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। এসব ভুক্তভোগীর একজন হলেন ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমিন সুলতানা সালমা।
তিনি জানান, বছরখানেক আগে মুগদায় হিজড়াদের অনুষ্ঠানে মিতুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্র ধরে মিতুর কথায় তিনি এসপিসিতে ঢোকেন এবং পরিবার ছাড়াও স্বজনদের নামে ১ হাজার ২০০ আইডি কিনে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু এই টাকার একটিও তিনি ফেরত পাননি। এ ছাড়াও তাকে বেবিচকের পর্ষদে পদ দেওয়ার নামেও ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শারমিন সুলতানা সালমা বলেন, মিতু বলল যদি এই পর্ষদে থাকেন তবে বিমানবন্দরে আটকা পড়া বিভিন্ন মাল কম দামে কিনতে পারবেন। বিনামূল্যে বিমান টিকেট পাবেন। শুধু নামটা দেন আমি আইডি কার্ড করে দেব। আসলে মিতু ভয়ঙ্কর প্রতারক। সে হিজড়া ফাউন্ডেশনের নাম ভাঙিয়ে শত শত মানুষকে এসপিসিতে নিয়ে নিঃস্ব করেছে। তবে সালমা এ ঘটনায় মুগদা থানায় অভিযোগ করেছেন।
আরেক ভুক্তভোগী দিদার হোসেন। পেশায় এক্সেসরিজের ব্যবসা করেন। ভারতীয় এক ব্যবসায়ীকে ৩৮ লাখ টাকার পণ্য দিয়ে বিপাকে পড়েন। ওই ব্যবসায়ীর কাছে টাকা তুলতে গিয়ে এক পর্যায় হিজড়া নেত্রী মিতুর সঙ্গে পরিচয় হয়। মিতু তাকে সেই টাকা তুলে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং বেবিচকে পদ দেওয়ার নামে বিভিন্ন সময়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব ঘটনার পর এই ব্যবসায়ীসহ মুগদা থানায় প্রতারিত বিভিন্ন ব্যক্তি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। মিতু অন্তত ২১ ব্যক্তিকে বেবিচকের পর্ষদে পদ দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। কুমিল্লার ভুক্তভোগী আব্দুল কাইয়ুম ও তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাদের কাছ থেকেও মিতু বেবিচক ও এসপিসির নাম করে টাকা নিয়েছে।
কে এই হিজড়া নেত্রী মিতু : মিতুর আসল বাড়ি নোয়াখালীর রামচন্দ্রগঞ্জে। তার স্বামীর বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। কিন্তু এই মিতু তার জাতীয় পরিচয়পত্রে গুলিস্তানে থাকা ২৫ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের পরিত্যক্ত ভবনকে নিজের ঠিকানা হিসেবে দেখিয়েছে। এ ছাড়াও মিতু নিজেকে কখনও ইডেনের সাবেক ছাত্রী ও বর্তমান প্রভাষক, সৌদি নাগরিক ও মিরপুরের পুলিশ লাইন্সের ছাত্রী বলেও পরিচয় দিত। মিতু বিভিন্ন সময়ে প্রতারণা করেই দনিয়া এলাকায় ফ্ল্যাট ও বাড়ি বানিয়েছে। ২০১৮ সালে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে ১৮ মাস জেল খেটেছে মিতু।
https://www.shomoyeralo.com/details.php?id=162636
============================================================
Advocate Shahanur Islam | An Young, Ascendant, Dedicated Human Rights Defender, Lawyer and Blogger in Bangladesh, Fighting for Ensuring Human Rights, Rule of Law, Good Governance, Peace and Social Justice For the Victim of Torture, Extra Judicial Killing, Force Disappearance, Trafficking in Persons including Ethnic, Religious, Sexual and Social Minority People.
No comments:
Post a Comment