মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান।
পুলিশ জানায়, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তিন সহযোগিকে নিয়ে নুরুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায় ওই কিশোর। ঘটনার ১ বছর পর গ্রেফতার করা হয়েছে মূল অভিযুক্তসহ তিন কিশোরকে। মোবাইল ট্র্যাকিং ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- শহরের হামদহ দাসপাড়ার শাহাবুদ্দীনের ছেলে আরাফাত (১৭),পাওয়ার হাউস পাড়ার মিন্টুর ছেলে নিশান (১৭) ও সদর উপজেলার রতনহাট গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে মিরাজ (১৬)। এ ঘটনায় জড়িত আরও একজনকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে ডিবি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, প্রতিবেশি কিশোর আরাফাতের সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য নুরুজ্জামানের সমকামিতার সম্পর্ক ছিল। এ কারণে সে প্রায়ই নুরুজ্জামানের বাড়িতে যেত। নুরুজ্জামানের স্ত্রী রাশিদা বেগম শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় প্রায়ই হাসপাতালে থাকতেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাশিদা বেগম অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার জন্য ব্যাংক থেকে টাকা তোলার বিষয়টি আরাফাতকে জানান নুরুজ্জামান।
পুলিশের ভাষ্য, ঘটনার দিন রাতে আরাফাত ও তার বন্ধুদের বাসায় ডাকেন নুরুজ্জামান। এক বন্ধুকে বাসার নিচে পাহারায় রেখে বাকি দু'জনকে নিয়ে রাত ৮ টার দিকে বাসায় যায় আরাফাত। রাত সাড়ে ১১টার দিকে নুরুজ্জামানকে শ্বাসরোধ, মাথায় ও গোপনাঙ্গে আঘাত করে ঘরে থাকা টিভি, মোবাইল ফোন, কাপড়, প্রসাধনী সামগ্রী একটি ট্রলি ব্যাগে করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরদিন সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রাশিদা খাতুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবিকে নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। তদন্তের দায়িত্ব পান ডিবি পুলিশের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম।
তদন্তের শুরুতে লুট হওয়া মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় ব্যবহারকারীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে এলাকায় খোঁজ খবর শুরু করেন পরিদর্শক নজরুল ইসলাম। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরাফাতের সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি নিশ্চিত হলে তাকে প্রথম সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়।
আরাফাতের সঙ্গে অন্যদের বন্ধুত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাড়ানো হয় সন্দেহের তালিকার সন্দেহভাজনের তালিকা। পরে মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করে আরাফাতকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। আরাফাতের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গ্রেফতার করা নিশান ও মিরাজ নামে দুই অভিযুক্তকে। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া আরও একজন এখনও পলাতক। তাকে ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আরাফাত গত ১৩ সেপ্টেম্বর এবং নিশান ও মিরাজ ১৪ সেপ্টেম্বর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
No comments:
Post a Comment