বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা পাবনায় ২৩ বছর বয়সী এক যুবকের সাথে ১৩ বছর বয়সী একটি বালকের কথিত বিয়েকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
পাবনার চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবিব বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে ১৩ বছর বয়সী বালকটির পিতা থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর ছেলেকে অন্যায়ভাবে আটক করে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে।
মি: হাবিব বলেন, "ওই যুবক ও বালক দুই ধর্মের অনুসারী। তবে হিন্দু রীতি অনুযায়ী পূজা-পার্বণের মাধ্যমে বিয়ে দেয়া হয়েছে বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন।"
তবে এ বিয়ের সাথে সমকামিতার কোন সম্পর্ক নেই বলে পুলিশ ধারণা করছে।
"কিছুদিন আগে ছেলেটির বাবা অসুস্থ হলে তার মা সুস্থতা কামনা করে পূজা দিতে চেয়েছিল। পরে তাঁর স্বামী সুস্থ হলেও তিনি স্বপ্নে দেখেন যে একটি মুসলিম ছেলের সাথে তার ছেলের বিয়ে দিলে পরিবারের জন্য ভালো হবে," বলছিলেন চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মি: হাবিব।
তিনি আরও বলেন, "যেহেতু ছেলে-ছেলে বিয়ে হয়েছে সেজন্য অনেকে এটাকে সমকামিতা হিসেবে ধরে নিচ্ছে।"
এজাহারে ঠিক কোন ধারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে কিংবা সুনির্দিষ্টভাবে কী অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি জানাতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, মার্চ মাসের ২৮ তারিখে ১৩ বছর বয়সী ছেলেটি মাদ্রাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়।
রাস্তায় বৃষ্টি এলে সে একটি দর্জির দোকানে অপেক্ষা করতে থাকে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় দর্জি ওই ছেলেটিকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যায় এবং কয়েকদিনের জন্য তাকে থাকতে দেয়।
এক পর্যায়ে দর্জির ২৩ বছর বয়সী ছেলের সাথে ১৩ বছর বয়সী ছেলেটিকে ভুল বুঝিয়ে বিয়ে দেয়া হয় বলে পুলিশ উল্লেখ করেছে।
কিন্তু বিলচলন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে কিছুটা ভিন্ন ভাষ্য পাওয়া যাচ্ছে।
বালকটিকে পুলিশ 'ভিকটিম' হিসেবে উল্লেখ করলেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, এ কথিত বিয়ের বিষয়ে উভয় পরিবারই অবগত ছিল।
কয়েকদিন আগে গোপনে এ বিয়ে সংগঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মি: আলী।
তিনি বলেন, "একজনকে পুরোহিত সাজিয়ে হিন্দু রীতিতে গোপনে এ বিয়ে করানো হয়। কয়েকদিন আগে এ বিয়ে হয়েছিল। পরে এ ঘটনা এলাকাবাসী জানতে পারে। এরপর আমি বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি।"
চাটমোহর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনও সরকার অসীম কুমার বিষয়টিকে 'সমকামী বিয়ে' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানার পর পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলা হয়েছিল।
মি: কুমার বলেন, "তদন্তে যে বিষয়গুলো চলে আসছে সেটা হলো আসলেই গে ম্যারেজের (সমকামী বিয়ে) মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে তারা সমকামী। এ মুহূর্তে ঐভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তবে সমকামী হিসেবে মোটামুটি প্রতীয়মান হয়েছে।"
ইউএনও এবং পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে, তবে বিস্তারিত একটি তদন্তও চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশের আইনে পুরুষদের ক্ষেত্রে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ২১ বছর। এছাড়া, দেশটিতে সমকামিতাও আইনত নিষিদ্ধ।
No comments:
Post a Comment