অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত
ন্যায়বিচার পাওয়া অধিকার মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। ন্যায়বিচার পেতে হলে নাগরিককে রাষ্ট্রের বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ন্যায়বিচার চাইতে হয়। রাষ্ট্র প্রচলিত বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নাগরিককে ন্যায়বিচার প্রদান করে। সব দেশে ন্যায়বিচার পাওয়ার এটাই সাধারণ পদ্ধতি।আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আমাদের আইন ও বিচার প্রক্রিয়া ঔপনিবেশিক বিচার ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে।
ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার পাওয়া দু:সাধ্য হয়ে পড়ে। বিচার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদের সবার ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য।
ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার পাওয়া দু:সাধ্য হয়ে পড়ে। বিচার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদের সবার ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য।
সাধারণ মানুষ বিশেষত নারী, শিশু, গরিব ও প্রতিবন্ধীদের মত অসহায় ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণির জনগণের পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়া কষ্টসাধ্য। এর জন্য শুধু আইন না, আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাও অনেকাংশে দায়ী। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়, পুলিশ, কারাকর্তৃপক্ষ অর্থাৎ বিচার সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তঃসমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি সেক্টর ভিত্তিক সংস্কার ও সুস্পষ্ট পরিকল্পনা, তন্তকারি প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত সক্ষমতা ও যথাযথ আইন বিদ্যমান থাকতে হবে।
সময়ের চাহিদা পুরণে ব্যর্থ আইন দিয়ে বিচার পরিচালনা কঠিন। বিচার কার্যের পদ্ধতিগত জটিলতা কমিয়ে একে আরো সহজতর করতে পারলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবে।
আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থায় অভিযোগকারী, আসামিসহ সাক্ষীদের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে অনেকগুলো বাঁধা পেরুতে হয়। বিচার কার্যক্রমের সঠিক তথ্য সহজে জানার সুযোগ না থাকা বাঁধাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আদালত থেকে কারো প্রতি সমন জারি বা পরোয়ানা তামিলের ক্ষেত্রে বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় প্রচলিত নিয়মে অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। ফলে সঠিক সময়ে সাক্ষী হাজির করা সম্ভবপর হয় না। পদ্ধতিগত কারণে সঠিক সময়ে আদালতে হাজির হওয়া অনেক সময় সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
সমন বা পরোয়ানা জারি করা পুলিশের কর্তব্য হওয়া সত্ত্বেও কতটি সমন বা পরোয়ানা জারি করা হলো বা কতজন জনসাক্ষী আদালতে হাজির হলো বা কতজন সাক্ষ্য প্রদান করল সে তথ্য সংরক্ষণের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি প্রচলিত চর্চায় বিরাজমান নেই।
তাছাড়া, জনসাক্ষী সংশ্লিষ্ট আদালতের সরকারি কৌশুলীর মাধ্যমে আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে সরকারি কৌশুলী ও আদালত পুলিশের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। তাছাড়া আদালত কর্তৃক প্রদত্ত সমন বা পরোয়ানা আদৌ জারি বা তামিল হলো কিনা সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক যথা সময়ে আদালতকে অবগত করা আবশ্যক।
ফৌজদারি মামলায় সরকারি কৌশুলী ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা প্রায়ই সাক্ষী যথাসময়ে আদালতে হাজির না হওয়ার কারণ দেখিয়ে মামলা মুলতবি করার আবেদন জানান। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র সাক্ষী হাজির হয়নি এই মর্মে সরকারি কৌশুলী ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের কারণে প্রায় ৪০ শতাংশ ফৌজদারি মামলা ১০ বারের বেশি সময় মুলতবি করা হয়েছে।
অধিকাংশ সময় থানায় দায়েরকৃত এজাহারের কপিতে আসামি ও সাক্ষীদের সঠিক ঠিকানা ও ফোন নম্বর অন্তর্ভূক্ত করা হয় না। তাছাড়া, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মেডিকেল অফিসারের যোগাযোগের নম্বর এবং তাদের বদলিজনিত নতুন কর্মস্থলের ঠিকানা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই।
এমনকি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ী আসামি, সাক্ষি বা অভিযোগকারীর জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট বদলি হলে বিচার চলাকালে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সমন বা পরোয়ানা জারির জন্য নতুন কর্মস্থলের ঠিকানাও অনেক সময় পাওয়া যায় না।
ফৌজদারি মামলা তদন্তে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের অনেক বড় ভূমিকা থাকলেও, মামলা তদন্তের সঠিক তথ্য তার জন্য খুব সহজে পাওয়া হয়ে ওঠে না। মামলায় পরোয়ানা তামিল না হলে সে বিষয়ে প্রতিবেদন পেশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।
পরোয়ানা জারির পর তা তামিল হলো কিনা অথবা তামিল না হলে সে বিষয়ে প্রতিবেদন পেশ বর্তমানে ম্যানুয়ালি সম্পন্ন করতে হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা, বেইল বন্ড, অভিযোগ গঠন, সমন এবং বিভিন্ন প্রকারের ফরম আদালতের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের হাতে লেখার কারণে অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। ফলে ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয় এবং ন্যায় বিচার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত বিচারের জন্য অপেক্ষমান ৩২ লক্ষ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে যুগৎপতভাবে সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সরকার বিচার ব্যবস্থা তরান্বিত করতে অন্যান্য সেক্টরের সঙ্গে বিচার বিভাগকেও দ্রুত ডিজিটালাইজড করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে করে খুব সহজেই প্রতিদিন মামলার তালিকা প্রণয়ন করে তা জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া যাবে।
কম্পিউটারাইজড অটোমেশন পদ্ধতির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে মামলা গ্রহণ করে মামলার মেরিট অনুযায়ী বিভিন্ন আদালতে তা বিতরণ করা যেতে পারে। হাতে লেখা সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করার পরিবর্তে কম্পিউটারিজড অটোমেশন পদ্ধতির মাধ্যমে তা করা যেতে পারে। হাতে লেখা পরোয়ানা, সমন বেইল বন্ড ইত্যাদি প্রেরণের পরিবর্তে ই-কমিউনিকেশনের মাধ্যমেও সেসব দ্রুত জারি করা যেতে পারে।
অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিংকে সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। জনসাক্ষীদের ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হওয়ার পরিবর্তে অডিও এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রচলনও বিবেচনা করা যেতে পারে।
আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সদব্যবহার করে একটি সহজ ও যুগোপযুগি বিচার ব্যবস্থার সূচনা করা যেতে পারে। সরকার এরই মধ্যে সেই শুভ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের পাশাপাশি আইন ও বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত ও সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
============================================================ Advocate Shahanur Islam | An Young, Ascendant, Dedicated Human Rights Defender, Lawyer and Blogger in Bangladesh, Fighting for Ensuring Human Rights, Rule of Law, Good Governance, Peace and Social Justice For the Victim of Torture, Extra Judicial Killing, Force Disappearance, Trafficking in Persons including Ethnic, Religious, Sexual and Social Minority People.