অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত
২০১৪ সালের শেষ দিকের কথা? সেসময় গণমাধ্যমের কল্যানে ইরাকে শ্রম পাচারের শিকার ১৮০ জন ব্যক্তির আর্তনাদ শুনেছিল এদেশের আপাময় জনতা । কতিপয় মানবাধিকার সংস্থার প্রচেষ্টায় শুধুমাত্র জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে পারলেও ভিটে মাটিসহ সবকিছু হাড়িয়ে তাড়া নিঃস্ব হয়ে পড়েছিল। সেসময় কিছুদিন দেশীয় গণমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে উচ্চ-বাচ্য করলেও সময়ের পরিক্রমায় সব কিছু স্থিমিত হয়ে যায়।
কেমন আছে সেসব শ্রম পাচারের ভিকটিম- যারা বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যারিয়ার ওভারসিস কনসালট্যান্ট লিমিটেড এর প্রতারণায় বেঁচে থাকার অবলম্বন হাড়িয়ে পথের ভিখারী। অথচ অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতারণা। আইন তাদের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি। দেশে ফিরে ভিক্টিমরা রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা করলেও তদন্তকারী কর্মকর্তারা রিক্রুটিং এজেন্সির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রদান করেছে। ফলে অর্থের কাছে ন্যায়বিচার পরাজিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে রীট করতে দেশের একটি স্বনামধন্য মানবাধিকার সংস্থার শরণাপন্ন হলে উক্ত মানবাধিকার সংস্থা দুই লক্ষ টাকা দাবী করে। নিঃস্ব ভিক্টিমদের পক্ষে সে অর্থ প্রদান করা সম্ভবপর না হওয়ায় তারা উচ্চ আদালতেও যেতে পারেননি।
বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যারিয়ার ওভারসিস কনসালট্যান্ট লি. ভিকটিমদের কাছ থেকে বিদেশে ভাল বেতনে চাকুরী দেয়ার প্রতিশুতি দিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত যাওয়ার আগে আদায় করেছিল। সে হিসেবে গড়ে ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা ভিকটিমদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ক্যারিয়ার ওভারসিস। অথচ বিদেশে কর্মী পাঠানোর জন্য সরকার নির্ধারিত ফিস ৮০ হাজার টাকা।
ইরাকে নেওয়ার পর রিক্রুটিং এজেন্সি ভিকটমিদের প্রতিজনকে দাস হিসেবে ইরাকের আবু রোরাব হাউজিং কোম্পানির কাছে ২৭ শ’ ইউএস ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা করে বিক্রয় করে। সে হিসেবে ১৮০ জনকে প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকায় বিক্রয় করা হয়।
পরবর্তীতে, ভিকটিমদেরকে নাজাফ শহর থেকে বাগদাদে নিয়ে এসে আবু আইয়াত নামে অপর একটি কোম্পানির কাছে প্রতিজন ভিকটিমকে ৭ হাজার ডলারে বিক্রয় করে। সে হিসেবে ভিকটিমদেরকে দ্বিতীয় দফায় প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকায় বিক্রয় করা হয়।
ক্যারিয়ার ওভারসিস কনসালট্যান্ট লি. ১৮০ জন ভিকটিমকে মোট বাইশ কোটি ছিয়ানব্বই লক্ষ আশি হাজার (২২,৯৬,৮০,০০০)টাকায় বিক্রয় করে। বিভিন্ন চাপে ১৮০ জন ভিক্টিমকে ৬০ হাজার টাকা করে সর্বমোট এক কোটি আট লক্ষ (১,০৮,০০,০০) টাকা ফেরত প্রদান করে। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে তারা দেশের রাজনৈতিক নেতা, আমলা অ পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিব্বি শ্রম পাচার চালিয়ে যাচ্ছে। আর যেসব ব্যক্তি তাদের কৃত শ্রম পাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার তাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে চলেছে।
বাংলাদেশ পুলিশ এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে ১৬৯১ জন ব্যক্তি মানব পাচারের শিকার হয়েছে। যাদের মধ্যে ১২৭৮ জন ব্যক্তিকে বিভিন্নভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। উল্লেখিত ঘটনার মানব ১৮০৩ জনকে অভিযুক্ত করে পাচার আইনে ৮৭৩ টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৪ জন পাচারকারী সাজা পেয়েছে। যা অপরাধের তুলনায় খুবই নগন্য। উল্লেখিত পরিসংখ্যান বলে দেয় যে, পাচারের ঘটনায় অল্প সংখ্যক মামলা হলেও পাচারকারীরা সমাজে আর্থিকভাবে/রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান হওয়ায় অধিকাংশ মামলায় পাচারকারীরা খালাস পেয়ে যায়।
তবে কি মানব পাচারকারীরা কখনোই আইনের আওতায় আসবে না?
============================================================ Advocate Shahanur Islam | An Young, Ascendant, Dedicated Human Rights Defender, Lawyer and Blogger in Bangladesh, Fighting for Ensuring Human Rights, Rule of Law, Good Governance, Peace and Social Justice For the Victim of Torture, Extra Judicial Killing, Force Disappearance, Trafficking in Persons including Ethnic, Religious, Sexual and Social Minority People.