Friday, May 1, 2015

সমকামীতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন: ভ্রান্ত ধারণা দূর করুন!

অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত
আমদের দেশের অধিকাংশ জনগণ সমকামিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানে না। ফলে তারা একদিকে সমকামীতাকে যখন্য অপরাধ ও পাপ বলে মনে করে আবার অন্যদিকে সমকামি ব্যক্তির প্রতি বিভিন্নভাবে বৈষম্য ও অত্যাচার, নিপীড়ন করে। তাই সমকামী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য ও অত্যাচার, নিপীড়ন না করে সমকামীতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন। নিজে সচাতন হোন, অন্যকে সচেতন করুন এবং সমকামী মানবাধিকার নিশ্চিত করুন:

সমকামিতা কি একটি মানসিক বিকৃতি: না, একেবারেই না। ১৯৯৩ সালের আগে মেডিক্যাল সায়েন্স-এ মনে করা হতো যে, এটা মানসিক রোগ। কিন্তু বিস্তর গবেষণায় দেখা গেছে, এটা কোন মানসিক রোগের শর্ত পূরণ করে না। যেমন, সমকামীরা অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই, সামাজিক বা প্রফেশনাল কাজে সমান পারদর্শী। বস্তুতপক্ষে, এদের মন মানসিকতা অনেক উদার, নরম, অন্যের প্রতি মায়া মমতায় ভরা। এ কারণেই, ১৯৯৩ সালে মনোরোগের টেক্সট বই থেকে রোগ সমকামিতাকে তুলে নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, সারা পৃথিবীর সকল মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মিলে এদের বিরুদ্ধে কোন বৈষম্য করাকে বেআইনি বা অন্যায় বলে মতামত দেন।

পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত মানুষ, যাদের আমরা প্রতিদিন দেখি, তারা সমকামী, কিন্তু সামাজিক, নৈতিক, প্রফেশনাল দিক থেকে এরা অন্যান্য স্বাভাবিক মানুষের মতোই। বিজ্ঞানে যা এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে তা হলোঃ এদের শরীরে একটি বিশেষ জিন (জিনেটিক প্যাটার্ন) থাকে যা বিষমকামীদের থাকে না। কিংবা, পৃথিবীর কেউ-ই ১০০ ভাগ সমকামী বা ১০০ ভাগ বিষমকামী হয়ে জন্মায় না। এদের মস্তিস্কের নিউরনের নিউরোট্রান্সমিটার, হরমোন এগুলোও কিছুটা ভিন্ন। অন্য আরেকটি ফ্যাক্টর হলো 'এপিজিনেটিক' যা পরিবেশ এমন কি বাবা-মার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গেও যুক্ত।

তাহলে একজন সমকামী হবার পেছনে অনেক কারণ যুক্ত যার অনেকগুলোই নিজেদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে। এসব জানার পরে কেন আমরা তাদের ঘৃণা করবো? শুধু ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে এ ছাড়া আর কোন যুক্তি নেই। অন্যান্য যুক্তিগুলো আমার নোটে দিচ্ছি। কারো ডায়াবেটিস হলে তাকে কি আমরা ঘৃণা করি? করি না। অন্যদিকে কেউ প্রেগন্যান্ট হলে বলি "অমুকে অসুস্থ"। আসলে প্রেগন্যন্সি কোন অসুস্থতা না। তেমনি কেউ যদি প্রকৃতিগতভাবে আলাদা হয়, তার জন্যে কোন ঘৃণা তার প্রাপ্য নয়।

সমকামিতা প্রকৃতি বিরুদ্ধ কারণ ছেলে এবং মেয়ের বিয়ে হয় সন্তান উৎপাদনের জন্য: সন্তান জন্মানোই যদি বিয়ের উদ্দেশ্য হয়, তাহলে প্রকৃতিগতভাবে যারা বন্ধ্যা, তাদের কি বিয়ের অধিকার থাকবে না? সন্তান উৎপাদনের জন্যে কি একমাত্র যৌন সঙ্গমই প্রয়োজন? সেকথা না হয় বাদই দিলাম। কেউ কেউ মূর্খের মতো সমকামিতাকে শুধু "যৌনতার রূপ", "পুঁজিবাদের ফসল, যেখানে বাৎসল্য নেই আছে ভোগবাদ" বলে চালিয়ে দিতে চান। এরা মূলত পুরো বিষয়টি সম্পর্কেই অজ্ঞ। একটি সন্তান উৎপাদনে অক্ষম যুগল যখন মিলিত হন, তখন কি সেখানে কেবলই যৌনতা থাকে? ভোগবাদীতা থাকে? পৃথিবীতে যতো সমকামী যুগল, তার চেয়ে অনেক বেশি বিষমকামী যুগলের কোন সন্তান নেই। তবে কি সেখানে কোন বাৎসল্য থাকে না? বিবর্তনের শারীরবিদ্যা না জানা থাকলেই এমন সরলীকরণ করা যায়। 

সমকামিতা থাকলে জনসংখ্যা কমে যাবে এবং মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে: ইউরোপের জনসংখ্যা কম বা কমে যাওয়ার কারণ হল সামাজিক এবং অর্থনৈতিক। কতভাগ মানুষ সেখানে সমকামিতার জন্যে জনসংখ্যা কমাচ্ছে? পৃথিবীর জনসংখ্যা এক মিলিয়ন থেকে ডাবল হতে যে সময় নিয়েছিল, এখন চার থেকে আট বিলিয়ন হতে তার এক চতুর্থাংশ সময় নিচ্ছে। তাই জনসংখ্যা নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নাই। অন্যদিকে প্রকৃতিতে সাড়ে তিন হাজারেরও অধিক প্রজাতির মধ্যে সমকামিতা আছে কিন্তু তারা তো নিশ্চিহ্ন হচ্ছে না। কারণ, জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিষমকামীরা তো থাকছেই।

মানুষ মাত্রেই কি ১০০% সমকামী অথবা ১০০ ভাগ বিষমকামী: না। আধুনিক গবেষণায় দেখা যায়, কোন মানুষই ১০০% সমকামী বা ১০০% বিষমকামী না; বরং একটি মিশ্র রূপ। তবে সর্বশেষ গবেষণায় সমকামীদের মধ্যে বিশেষ জিনেটিক প্যাটার্ন পাওয়া গেছে এক্স ক্রোমোজোম এবং ক্রোমোজোম ৮-এ, যা বিষমকামীদের থেকে আলাদা। এটা অনেক বড় বায়োলজিক্যাল প্রমাণ হতে পারে যে, সমকামিতা মূলত জিনেটিক। তবে অন্যান্য জিনেটিক প্রিডিস্পোজিশনের মতো এ রূপটিও সমাজ, সংস্কৃতি, ব্যক্তিগত চয়েস, পরিবেশ অনেক কিছু মিলিয়েই একজনের জন্যে প্রধান হতে পারে। কিন্তু কাউকে ধরে বেঁধে জোর করে এই সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন বদলানো যায় না। অর্থাৎ একজন সমকামী কে ধরে বেঁধে বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে বিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে, এরকম ধারণাও ভ্রান্ত। 

সমকামীরা বিয়ে করলে পরিবার ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে: এই কথাটা সর্বৈব মিথ্যা। কারণ, সমকামীদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ কম। এরা দত্তক নিয়ে সন্তানদের যে ভালবাসা দিয়ে গড়ে তুলছে, গবেষণায় দেখা যায় তা বিষমকামীদের তুলনায় অনেক বেশি মজবুত পরিবার তৈরি করে।

সমকামিতাকে উস্কে দিলে অনাচার বেড়ে যাবে: সামাজিক ক্ষেত্রে অনাচারীর সংখ্যা কি কম? ছেলে এবং মেয়ের বিয়ের মধ্যে কি অনাচার হয় না? বরং গবেষণা বলে সমকামী যুগল অনেক বেশি বিশ্বস্ত থাকে নিজ নিজ পার্টনারের প্রতি। আরেকটা কথা, সমকামীরা প্রকৃতিগতভাবে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে না। এদের জোর করে বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে বিয়ে দিলে আরও বড় অনাচার করা হয়। কারণ তাতে দুটো জীবন নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া যা অনাচার, তাকে সমর্থন না দিয়েই তো সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

সমকামীদের সমর্থন করার অর্থ কি সমকামী হওয়া: এটি একেবারেই ছেলেমানুষী অভিযোগ যে সমকামীদের সমর্থন করার অর্থই হল নিজেরা সমকামী হওয়া। কেউ যদি ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, তাহলে কি সে ধর্ষিত হয়? কিংবা কেউ যদি বৃক্ষরোপণ নিয়ে আন্দোলন করে তাহলে নিজে বৃক্ষ হয়ে গেল? এই সব খেলো যুক্তি কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 

ধর্মে সমকামিতাকে গ্রহণ করতে না করা হয়েছে:এই জায়গায় এসেই মানুষের জন্যে সবচেয়ে কঠিন হয়ে পড়ে গ্রহণ করতে। আমি কাউকে আহত না করে কয়েকটা কথা বলি। কোন ধর্মগ্রন্থ কিন্তু দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করতে পারে নি। বাইবেলে কথা না শুনলে দাসদের রীতিমতো শাস্তির দেয়ার অনুমতি আছে। এমনকি ইসলামে দাসদেরকে মুক্তি করলে পূণ্য, দাসদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার কথা বলা আছে। আবার দাসীদের সঙ্গে সহবাসেরও অনুমতি আছে (ক্ষেত্র ভেদে), কিন্তু নিষিদ্ধ করা হয় নি। তাহলে কি আমরা দাসপ্রথার মতো অমানবিক প্রথায় ফিরে যাবো? যাবো না। ঘুষকে নিষিদ্ধ করা হলেও তা কি বন্ধ আছে? তাহলে ধর্মেরও ইন্টারপ্রিটেশন বদলাতে হতে পারে। কারণ ধর্ম-ই একমাত্র নৈতিকতার মাপকাঠি না।

========================================================================
Advocate Shahanur Islam | An Young, Ascendant, Dedicated Human Rights Defender, Lawyer and Blogger in Bangladesh, Fighting for Ensuring Human Rights, Rule of Law, Good Governance, Peace and Social Justice For the Victim of Torture, Extra Judicial Killing, Force Disappearance, Trafficking in Persons including Ethnic, Religious, Sexual and Social Minority People.