অ্যাডভোকেট
শাহানূর ইসলাম সৈকত: বর্তমান সময়ে
দেশের রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধির ফলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তীইক আটকের সংখ্যাও
বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। প্রতিদিন খবরের কাগজে চোখ বুলালে সারা দেশে বিরোধী দলীয় শতশত
নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের আটক ও গ্রেফতারের খবর আমরা দেখি। যাদের মধ্যে অনেকেই দোষী
আবার অনেকেই নির্দোষ। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে লাখ লাখ অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচারপুর্ব
কারাগারে অন্তরীন থেকে বিচারের আগেই কার্যত শাস্তি ভোগ করছে।
যদিও বিচারে দোষী
সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সকল অভিযুক্তকে আইনগতভাবে নির্দোষ বলে গন্য করা হয়,
তারপরও বিচারপুর্ব আটকের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান আজকাল যেন নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার।
আর বিচারপূর্ব আটক অবস্থায় তারা অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতন ও জীবনের প্রতি হুমকিসহ
বিভিন্ন প্রকার সহিংসতার শিকার হয়। এমনকি অধিকাংশে তাদেরকে ক্ষেত্রে ঘুষ প্রদানে বাধ্য করা হয়।
বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সকল ব্যক্তির নির্দোষ বিবেচিত হওয়ার অধিকার
সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত। কিন্তু তৃতীয়
বিশ্বের দেষসমূহে তিন মিলয়নেরও বেশী মানুষ বিচারপূর্ব সময়ে কারাগারে অন্তরীন থেকে
একপ্রকারের শাস্তি ভোগ করছে।
বিচারপূর্ব সকল
আটকই যে অযৌতিক তা কিন্তু নয়। যেক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক রাখা না হলে তা
ন্যায় বিচারের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে অন্য কোন বিকল্প না থাকলে
বিচারপূর্ব আটক রাখা যেতে পারে। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে অভিযুক্তকে খুব ছোট অপরাধের
কারনে আটক রাখা হয়। তাতে দেখা যায় যে, তাঁরা দোষী সাব্যস্ত হলে যতদিন সাজা প্রাপ্ত
হত, তাঁর চেয়ে বেশীদিন তারা বিচার পূর্ব আটক রয়েছে। যারা অধিকাংশ গরীব ও সমাজের
প্রান্তিক শ্রেনীর। শুধুমাত্র জামিন নেওয়ার জন্য ভাল আইনজীবী নিয়োগ অথবা ঘুষ
প্রদান করতে না পারায় তাদের দীর্ঘদিন বিনা বিচারে আটক থাকতে হয়।
বিচারপূর্ব
কারাগারে আটক অনেক ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে দোষী নয়, শুধুমাত্র ক্ষমতার অপব্যবহারের
মাধ্যমে তাদের আটক করে কারাগারে অন্তরীন রাখা হয়। যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহিংসতা,
নির্যাতন এবং শারীরিক ও মানসিক অপব্যবহারের শিকার হন। বিশেষ করে কারাগারে অন্তরীন
হওয়ার প্রথম কয়েকদিন তারা স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে অতিরিক্ত নির্যাতনের শিকার হন।
আন্তর্জাতিক আইন ও মানদণ্ড অনুযায়ী কারাগারে অন্তরীন বিচারপূর্ব আটক ব্যক্তিকে
শাস্তি প্রাপ্ত কয়েদীদের কাছ থেকে পৃথক রাখার নিয়ম হলেও তাদের কয়েদীদের চেয়ে খারাপ
পরিস্থিতিতে রাখা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের থাকার জায়গা খুবই সংকীর্ণ
এবং ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ব্যক্তিদের সেখানে আটক রাখা হয়। তাছাড়া, সাধারণ
শিক্ষা, কারীগরি শিক্ষা, বিনোদনসহ কাজের সুযোগের ক্ষেত্রে বিচারপুর্ব আটক ব্যক্তি
সাজাপ্রাপ্ত কয়েদীদের চেয়ে অনেক কম সুযোগ পেয়ে থাকে।
বিচারপূর্ব আটক
দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশাল অন্তরায়। বিশেষ করে গড়ীব ব্যক্তির উন্নয়নে
ক্ষতির কারণ হয়ে দারায়। ফলে একজন ব্যক্তির আয় এবং চাকুরীর সুযোগ ব্যহত হয়। বিচারপূর্ব
আটকের ফলে যে শুধুমাত্র আটক ব্যক্তির আয় বন্ধ হয়ে যায় তা নয়, আটক ব্যক্তির মুক্তির
জন্য তাঁর পরিবারকে আইনজীবীর ফিস ও আদালত সংক্রান্ত অন্যান্য খরচের যোগান দিতে
হয়।এতে করে একটি রাষ্ট্রের রাজস্ব কমে যায় এবং খরচ বৃদ্ধি পায়। যা রাষ্ট্রের
সার্বিক উন্নয়ন ব্যহত করে।
বিচারপূর্ব আটক ও
বিনা বিচারে দীর্ঘদিন কারাগারে অন্তরীন রাখা আইনের শাসনের পরিপন্থী এবং তার পরিনাম
কখনো রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না।স্পষ্টত কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচারপুর্ব
আটকের পর একটি নির্দিষ্ট যুক্তিযুক্ত সময় পর্যন্ত বিচারপুর্ব কারাগারে অন্তরীন
রাখা প্রয়োজন হতে পারে, তবে তা যেন কোনভাবেই সীমাহীন সময়ের জন্য না হয়। অন্যথায়
দেশের আইনের শাসন ভুলুন্ঠিত হবে। রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন ব্যহত হবে।
====================================================================== "Advocate Shahanur Islam, an young, ascendant, dedicated & promising human rights activist/defender, lawyer & blogger in Bangladesh working for ensuring human rights, rule of law, good governance, peace & social justice for ethnic, religious, social and sexual minority community people including women and children". A Personal blog of Advocate Shahanur Islam. কপিরাইট © অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত. সকল সত্ব ® সংরক্ষিত. শাহানূর ডট ব্লগস্পট ডট কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোন নিবন্ধ, মতামত, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ব্যতীত ব্যবহার আইনগত দণ্ডনীয়. মোবাইল: ০১৭২০৩০৮০৮০, ইমেইলঃ saikotbihr@gmail.com, ব্লগ:www.shahanur.blogspot.com.