Saturday, February 15, 2014

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সংবিধি ও যুদ্ধাপরাধের বিচার

অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত: বিগত কয়েক শতকে সংঘটিত হয়েছে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনাসমূহগত কয়েক দশকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ২৫০টিরও বেশী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছেএতে ০৬ মিলিয়নেরও বেশী মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেযার অধিকাংশ নারী ও শিশু ১৭০ মিলিয়নের ও বেশী মানুষ তাদের সহায় সম্পত্তি ও মান সম্মান হারিয়েছেযুদ্ধের ভয়াবহতার বেশিভাগ কথা আমরা ভুলে গেছিযদিও গুটি কয়েক যুদ্ধাপরাধীকে আমরা বিচারের সম্মুখীন করতে পেরেছি, তবে অধিকাংশ
অপরাধী ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যাকে সংজ্ঞায়িত করে অনেক আইন ও নীতিমালা প্রনয়ণসহ নানারকম আন্তর্জাতিক চুক্তি ও প্রোটোকল প্রণীত হওয়া সত্ত্বেও তা বাস্তবে প্রয়োগে ব্যর্থ হয়ফলে ভবিষ্যৎ স্বৈর শাসক, তাদের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ থেকে নিবৃত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়

তাই একটি অব্যর্থ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের ১৫ জুন থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ইতালির রোম নগরে সমগ্র বিশ্বের ১২০টি দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কুটনীতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং ১২০-৭ ভোটির বিপূল ব্যবধানে আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালত সংবিধি বা রোম সংবিধি গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয় পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাষ্ট্র কর্তৃক সংবিধিটি অনুমোদিত হওয়ায় ২০০২ সালের ১ জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কার্যকারিতা লাভ করে

আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালত সংবিধি বা রোম সংবিধিতে মোট ১৩ টি অধ্যায় এবং ১২৮ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে

অধ্যায় ১ : আদালত প্রতিষ্ঠা

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতিষ্ঠা ও আদালতের সাথে জাতিসংঘের সম্পর্ক বিধান সমূহ এ অধ্যায়ের ১ থেকে ৪ অনুচ্ছেদে আলোচিত হয়েছেআন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে এ আদালতটি প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘের সাথে এ আদালতের সম্পর্ক প্রস্তুতিমূলক কমিশনের বিবেচনাধীন একটি সমঝোতা চুক্তির আওতায় নির্ধারিত হয়

অধ্যায় ২ : এখতিয়ার, মামলার বিচার যোগ্যতা এবং প্রযোজ্য আইনসমূহ

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত অপরাধ, নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা, মামলার বিচার যোগ্যতা, আদালতে উপস্থাপিত মামলাগুলোর ব্যাপারে প্রযোজ্য আইনসমূহ সম্পর্কে এ অধ্যায়ের ৫ থেকে ২১ অনুচ্ছেদে আলোচিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কোন রাষ্ট্র বা ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিচারের এখতিয়ার রয়েছে এবং এ সংক্রান্ত অপরাধসূমহ এ আদালত সরাসরি আমলে নিয়ে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারে

কোন প্রকার বিভ্রান্তি বা অস্পষ্টতা এড়ানোর জন্য রোম সংবিধিতে খুব সতর্কতার সাথে এই অপরাধগুলো সংজ্ঞায়িত ও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছেএখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে রোম সংবিধিতে আন্তজাতিক অপরাধসমূহের নতুন কোন সংজ্ঞা প্রণয়ন করা হয়নিবরঞ্চ প্রচলিত এবং প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক ইতোমধ্যে গৃহীত ও স্বীকৃত অপরাধগুলোকে সংবিধিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে

রোম সংবিধি মতে গণহত্যা বলতে বুঝায় সেইসব নিষিদ্ধ কাজসমূহ (যেমন-হত্যা, মারাত্মক আঘাত প্রদান ইত্যাদি) যা কোন নির্দিষ্ট দেশের, বর্ণের, ধর্মের বা জাতির জনগণকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত হয় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলতে সে সকল অপরাধসমূহের বুঝায় যা সাধারণ নিরস্ত জনগনের বিরুদ্ধে এবং সুবিস্তৃত ও পরিকল্পিত আক্রমনের অংশ হিসেবে ( খুন, হত্যা, ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব, জোরপূর্বক গুম করা এবং বর্ণ বৈষম্য করা) সংঘটিত হয়

যুদ্ধাপরাধ হল ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনের মারাত্মক লংঘন অথবা যুদ্ধের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রীতিনীতির চরম লংঘণযুদ্ধাপরাধ আন্তর্জাতিক বা আভ্যন্তরীণ যুদ্ধে সংঘটিত হতে পারেগণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসমূহ শান্তিকালীন অবস্থা বা যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থা অর্থাৎ যখনি সংঘটিত হক না কেন তা প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিকে অবশ্য শাস্তি পেতে হবে

রোম সংবিধিতে যৌন নিপীড়ন মূলক অপরাধসমূহ যথাঃ ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব, পতিতাবৃত্তি ও গর্ভধারণে বাধ্য করা ইত্যাদি অপরাধসমূহের অন্তর্ভূক্ত করে শাস্তিযোগ্য বলে হন্য করা হয়েছেএই কাজগুলোর কোন একটি বা একাধিক যখনই কোন স্থানে সুপরিকল্পিত ও সুবিস্তৃত ভাবে সাধারণ জনতার বিরুদ্ধে আক্রমনের অংশ হিসেবে সংঘটিত হয়, তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে গন্য করা হয়তা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীন যুদ্ধে সমানভাবে প্রযোজ্য হয়

ভীত সন্ত্রস্ত ভিকটিম ও সাক্ষীদের সাহায্য করার জন্যে আন্তজাতিক অপরাধ আদালত একটি ভিকটিম ও সাক্ষী ইউনিট গঠন করেএই ইউনিট ভিকটিম ও সাক্ষীদের নিরাপত্তার জন্যে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থাসহ তাদের কাউন্সেলিং প্রদান ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেতবে এক্ষেত্রে অবশ্য অভিযুক্তের সকল আইনগত অধিকারগুলো মাথায় রেখে এসব ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়ে থাকে

আদালত ভিক্টিম ও সাক্ষীদের গোপনীয়তা, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখেবিশেষ করে যে সকল বিচারের বিষয়ে যৌন বা লিঙ্গ ভিত্তিক অপরাধের সংশ্লিষ্টতা থাকে সেসব ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়ে থাকেআদালত নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে ভিকটিমের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারেঅপরাধী ব্যক্তির নিকট থেকে আদায়কৃত জরিমানা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে জমাকৃত অর্থ দ্বারা ভিক্টিমের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে

অধ্যায় ৩ : অপরাধ আইনের সাধারণ নীতিমালা

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সুষ্ঠু কার্যপদ্ধতি নিশ্চিত করার লক্ষে বিভিন্ন আইন ব্যবস্থা থেকে প্রণীত অপরাধ আইনের সাধারণ নীতিসমূহ এ অধ্যায়ের ২২ থেকে ৩৩ অনুচ্ছেদে আলোচিত হয়েছেযে নীতিগুলো এ অংশে সন্নিবেশিত হয়েছে তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আদালত প্রতিষ্ঠা হওয়ার পূর্বে সংঘটিত কোন অপরাধ সেখানে বিচার্য হবে না, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আইনের কোন মারাত্বক লংঘনের জন্য ব্যক্তি বিশেষের বিচার এই আদালতে করা যাবে

অভিযুক্ত ব্যক্তি যেই হক না কেন, সংঘটিত অপরাধের দায় সবার উপর সমভাবে বর্তাবেএক্ষেত্রে তার সামাজিক অবস্থান, রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয় বা সামাজিক পদ মর্যাদা কোন বাঁধা বলে গন্য হবে নাতা সে কোন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান অথবা সংসদ সদস্য বা নির্বাচিত প্রতিনিধি বা সাধারণ নাগরিক হক না কেনআর কোন অভিযুক্ত ব্যক্তির পদমর্যাদার কারণে আদালত প্রদত্ত শাস্তির পরিমান কম বা বেশী করবে না

কোন ক্ষেত্রে যদি কোন ব্যক্তি তার উদ্ধতম কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোন অপরাধ করে থাকে তবে সে এ অপরাধের দায় থেকে মুক্ত হতে পারেকিন্তু একজন কমান্ডার তার অধস্তন কর্তৃক সংঘটিত সকল অপরাধের দায় বহন করবেএছাড়া দায় বর্তানোর জন্য ন্যূনতম বয়স, তামাদি আইন, কোন কাজ করা বা কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির দায় ইত্যাদি বিষয়গুলো এই অধ্যায়ে সুস্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে

অধ্যায় ৪: আদালতের গঠন ও পরিচালনা

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গঠন, বিচারকদের যোগ্যতা ও স্বাধীনতার বিষয়গুলো এ অধ্যায়ের ৩৪ থেকে ৫২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে  এ আদালত উচ্চ নৈতিক চরিত্র, পক্ষপাত হীনতা, সততা ও পেশাদারী যোগ্যতাসম্পন্ন, ১৮ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত হয়তাছাড়া বিচারকদের তাদের নিজ দেশে উচ্চতম বিচার বিচারবিভাগীয় পদে নিয়োগ লাভের যোগ্যতা থাকা আবশ্যক

প্রত্যেক বিচারক ফৌজদারি আইন ও বিচার পদ্ধতি সম্পর্কে সম্মক ধারনা এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রাসঙ্গিক দিক বিশেষতঃ আন্তজাতিক মানবাধিকার বিষযে সম্মক জ্ঞানের অধিকারী হবেনআদালতের সত্যিকার আন্তর্জাতিক ও সুষম গঠন নিশ্চিত করার জন্য পৃথিবীর প্রধান প্রধান বিচার ব্যবস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্ব, সমতার ভিত্তিতে ভৌগলিক প্রতিনিধিত্ব ও নারী – পুরুষ বিচারকের মধ্যে সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়পক্ষ রাষ্ট্রসমূহের দুই-তৃতীয়াংশের উপস্থিতিতে গোপন ব্যালটের ভিত্তিতে প্রতিটি রাষ্ট্র থেকে সর্বোচচ একজন বিচারক ৯ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কোন অপরাধের বিচার করতে হলে অবশ্য সংশ্লিষ্ট দেশকে এ আদালতের পক্ষভুক্ত হতে হবে অথবা সাময়িকভাবে উক্ত দেশকে এ আদালতের এখতিয়ার মেনে নিতে হবেতবে যদি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক মামলাটি প্রেরিত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে রোম সংবিধির পক্ষভুক্ত নয় এমন রাষ্ট্রের নাগরিকেরও এ আদালতে বিচার করা যাবেতবে এ ক্ষেত্রে এরূপ অপরাধের বিচার রাষ্ট্রীয় আদালতে করা সম্ভব নয় বা রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ তা নিষ্পত্তি করতে আগ্রহী নয় বলে প্রতীয়মান হতে হবে

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত জাতীয় আদালতের উপর কোন হস্তক্ষেপ করতে পারে নাবরঞ্চ জাতীয় বিচার ব্যবস্থাকে জোরদার করে থাকেকেননা রোম সংবিধিতে উল্লেখিত সবগুলো অপরাধের ক্ষেত্রে বিচারের প্রথম প্রথম দায়িত্ব জাতীয় আদালতের এবং জাতীয় আদালত সে অপরাধের তদন্ত ও বিচার করবেশুধুমাত্র যে সকল রাষ্ট্র উক্ত অপরাধের বিচার বিচার করতে অপারগ ও আগ্রহী নয় সেসকল অপরাধের বিচার করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতএছাড়া, অভিযুক্ত ও মামলায় আগ্রহী রাষ্ট্র আদালতের এখতিয়ার বা মামলার গ্রহণযোগ্যতা চালেঞ্জ করতে পারবে

অধ্যায় ৫: তদন্ত ও মামলার সুচনা

অভিযুক্ত অপরাধের ব্যপারে তদন্ত  প্রক্রিয়া এবং যে প্রক্রিয়ায় কৌসুলি তদন্ত শুরু ও পরিচালনা করে তা এ অধ্যায়ের ৫২ থেকে ৬১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছেকোন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এ রকম পর্যাপ্ত প্রমাণ সাপেক্ষে একজন স্বাধীন প্রসিকিউটর ঘটনার তদন্ত শুরু করবেতবে কোন দেশ যদি একটি ঘটনার বিচার করতে সমর্থ ও ইচ্ছুক বলে প্রতীয়মান হয়, তবে সেক্ষেত্রে সেদেশের নিজস্ব তদন্তকার্য শুরু করা পর্যন্ত প্রসিকিউটরকে অপেক্ষা করতে হবেতদন্ত শুরু করার আগে প্রসিকিউটরকে অভিযোগ বিষয়ক সকল তথ্য ও সহায়ক প্রমাণাদি জমা দিয়ে প্রি-ট্রয়াল চেম্বার (তিন সদস্য বিশিষ্ট আদালতের প্রথম স্তর) হতে অনুমতি যোগার করতে হয়

রাষ্ট্র পক্ষসমূহের সম্মলিত গোপন ব্যালটের মাধ্যমে প্রসিকিউটর নির্বাচন করতে হয়প্রসিকিউটর হতে হলে তাকে অবশ্যই উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী, ফৌজদারী মামলা চালানোর মত প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হয় অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যাক্তিদের অধিকারসমূহ এ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে

অধ্যায় ৬: বিচার

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন বিষয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বিচারের প্রশ্ন, দোষ শিকারের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার প্রক্রিয়া, অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয়সমূহ এ অধ্যায়ের ৬২ থেকে ৭৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছেসংবিধিতে বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রত্যেকেই নির্দোষ বলে পরিগণিত হবে

এছাড়াও, অপরাধের শিকার এবং সাক্ষীদের জন্য একটি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান নির্ধারন আদালতের এখতিয়ার এবং ক্ষতিপূরণ এওয়ার জন্য ব্যক্তিকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের ক্ষমতা এ অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়েছে 

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পক্ষভুক্ত কোন রাষ্ট্র পক্ষের সীমানার মধ্যে সংঘটিত অপরাধ, পক্ষ রাষ্ট্রের অভিযুক্ত নাগরিক ও নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক প্রেরিত যে কোন অপরাধের বিষয়ে এ আদালত তার এখতিয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার কার্য সম্পন্ন করতে পারেঅভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনজীবী নিয়োগসহ আত্মপক্ষ সমর্থনের যথাযথ সুযোগ প্রদান করা হয়ে থাকে

অধ্যায় ৭: শাস্তিসমূহ

অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য শাস্তিসমূহ যার মধ্যে রয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, নির্দিষ্ট সংখ্যক বছরের জন্য কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড ইত্যাদি এ অধ্যায়ের ৭৭ থেকে ৮০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মানবাধিকারের মান সমুন্নত রেখে অপরাধের মাত্রানুযায়ী ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করতে পারে

তবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এখতিয়ার এ আদালতের নেইএছাড়া এ আদালত জরিমানা ধার্য ও সংশ্লিষ্ট অপরাধের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ প্রদান করতে পারেঅপরাধের শিকার ব্যক্তি ও তার পরিবারের কল্যাণের জন্য একটি ট্রাষ্ট গঠনের কথাও এ অধ্যায়ে রয়েছেশাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার জন্য আদালত সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে অনুরোধ করতে পারে এবং অনুরোধ প্রাপ্ত দেশ তা মেনে চলতে বাধ্যঅন্যথায় তা আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন বলে গন্য হবে

অধ্যায় ৮: আপিল ও রিভিউ

রায় বা দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল, আপিল প্রক্রিয়া, দণ্ডের বিরুদ্ধে রিভিশন, সন্দেহজনক ব্যক্তি, অভিযুক্ত ব্যক্তি বা দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির  জন্য ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলো এই অধ্যায়ের ৮১ থেকে ৮৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছেদোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি বা কৌঁসুলী এই ক্ষমতা বলে আদালতে আপীল করতে পারে যে, বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ব্যহত হয়েছেসংবিধিতে বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, আটক বা দোষী সাব্যস্ত করা হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন

লেখক:মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী ও সাংবাদিক; প্রতিষ্ঠাতামহাসচিব, জাস্টিসমেকার্সবাংলাদেশ; মোবাইলঃ ০১৭২০৩০৮০৮০, ইমেল: saikotbihr@gmail.com, ব্লগ: www.shahanur.blogspot.com

নিবন্ধটি নিম্নোক্ত নিউজ মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে:

১।  আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সংবিধি ১৯৯৮ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার, BanglaNews24.Com, November 18, 2012

২। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সংবিধি ১৯৯৮ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার,  BdLawNews.Com, January 12, 2013 

======================================================================  
Personal site of Advocate Shahanur Islam (an young, ascendant and promising human rights defender and lawyer) working for ensuring human rights, rule of law and social justice in Bangladesh and the Globe. কপিরাইট © অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত. সকল সত্ব ® সংরক্ষিত. শাহানূর ডট ব্লগস্পট ডট কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোন নিবন্ধ, মতামত, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ব্যতীত ব্যবহার আইনগত দণ্ডনীয়.