Tuesday, February 12, 2013

চাই প্রতিবাদ, চাই প্রতিরোধ!!!

রাস্তাঘাটে মেয়েদের উক্ত্যক্ত বা হয়রানি করা, মেয়েদের উদ্দেশ্যে কটু মন্তব্য ও অশ্লীল ইঙ্গিত করা, শিস দেওয়া, কুৎসিত শারীরিক অঙ্গভঙ্গি করা, পথ আটকে ধরা বা ওড়না টেনে ধরার মত অশোভন আচরন ইত্যাদি যৌন হয়রানি বা টিজিং এর বিষয়কে গুরুত্বহীন হিসেবে চিহ্নিত করতে আমাদের সমাজে “ইভ টিজিং” শব্দটি ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। “ইভ টিজিং” কথাটির মাধ্যমে আসল সমস্যা বা
অধঃপতনটা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে না।

“ইভ টিজিং” আজ শুধুমাত্র বখাটেদের বখাটেপনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। টিজিং যারা করে তারা মুলত এক ধরনের অপরাধী, দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী। সভ্য সমাজে এই শব্দটি ব্যবহার দেখা যায় না। টিজিং শব্দের আভিধানিক অর্থ ঠাট্রা মশকরা করা। এই ঠাট্রা মশকরা করার কারনে কেউ আত্মহত্যা করে কি? আসলে টিজিং এর মাধ্যমে একজনের মানবাধিকার চলাচলের অধিকার সর্বোপরি বাঁচার অধিকার খর্ব করা হয়। তাই, টিজিংকে সুস্পষ্টভাবে যৌন হয়রানি বা যৌন নির্যাতন হিসেবে গন্য হয়।


যৌন হয়রানি আমাদের সমাজে মহামারীর আকার ধারন করেছে। আমাদের দেশে শতকরা ৯১ ভাগ নারী যৌন হয়রানীর শিকার হয়। সহজ টার্গেট বলে মেয়েশিশুরা যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে বেশী। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং সমাজে ও পরিবারে নারীদের প্রতি সম্মানের অভাবই যৌন হয়রানীর মূল কারণ। নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়, কর্মহীন অলস মন, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, আইনী দুর্বলতার সাথে আইন প্রয়োগে অনীহা এবং প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া দোষী সাব্যস্ত করতে না পারা, টিজিং এর সাথে যুক্ত দুর্বৃত্তদের রাজনৈতিক ও সামাজিক-পারিবারিক সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার কারনেই সাধারনত যৌন হয়রানি সংগঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা তরুন প্রজন্মের একাংশকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে তাদের মান্সিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং তারা অপ্রাধ জগতের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। বখে যাওয়া এসব তরুন যুবকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে গোটা সমাজ এবং তাদের দ্বারা টিজিং এর শিকার হয়ে আত্বহননের পথ বেছে নিচ্ছে কিশোরীরা।

সাধারণভাবে যৌন হয়রানিকে কম ক্ষতিকর একটি ব্যপার মনে করা হলেও এর জন্য জাতিকে অনেক বড় মূল্য দিতে হয়। যৌন হয়রানির কারনে মেয়েদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করে, তারা সব সময় উত্ত্যক্ত হবার ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকে। এতে মেয়েদের সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ, সৃজনশীলতা ও সম্ভাবনা বিঘ্নিত হয়। তারা তারা নিজেদের নিরাপত্তাহীন ও অসহায় মনে করে। তারা ক্রমশ কুণ্ঠিত, লজ্জিত, আত্মবিশ্বাসহীন, মুখচোরা ও দূর্বল হয়ে উঠে। অনেক মেয়েই শিক্ষাঙ্গন থেকে ঝরে পরে। বাল্যবিয়ের শিকার হয়। বসতবাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। মেয়েশিশু ও তার পিতা মাতার আত্মহননের প্রবণতা বাড়ে। সর্বোপরি তাদের জীবন সীমাবদ্ধ বা সংকীর্ণ হয়ে পড়ে।

যৌন হয়রানির পরিমান বর্তমানে অসহনীয় পর্যায়ে পৌছেছে। এর থেকে পরিত্রাণ আমাদের সবার কাম্য। সেজন্য পরিবার এবং সমাজ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। শিশু কিশোরদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, তাদের প্রতিবাদ করতে শিখতে হবে। পরিবার, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সবখানে, সবায় মিলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করতে হবে।

======================================================================  
Personal site of Advocate Shahanur Islam (an young, ascendant and promising human rights defender and lawyer) working for ensuring human rights, rule of law and social justice in Bangladesh and the Globe. কপিরাইট © অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত. সকল সত্ব ® সংরক্ষিত. শাহানূর ডট ব্লগস্পট ডট কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোন নিবন্ধ, মতামত, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ব্যতীত ব্যবহার আইনগত দণ্ডনীয়.

No comments:

Post a Comment