Monday, April 28, 2014

আইনগত সহায়তা: জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছবে কি?

অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত:প্রত্যেক বিচারপ্রার্থীর নিজে অথবা পছন্দমত আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে চাপমুক্ত পরিবেশে ভয়ভীতির উর্দ্ধে থেকে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। গণপ্রজানন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান, মানবাধিকার ঘোষণাপত্রসহ নাগরিক ও রাজনোইতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী স্বীকৃত এসব মানবাধিকার অনস্বীকার্য।
কিন্তু বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র রাষ্ট্রে বিচার প্রক্রিয়া ব্য্যবহুল হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা অনেক সময় অর্থের অভাবে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। ফলে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়।


কোন ব্যক্তি যেন ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীর ন্যায় বিচায় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ প্রণয়ন করে। উক্ত আইনকে যযাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকার সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় পৃথক পৃথক জেলা আইনসহায়তা অফিস স্থাপন করেছে এবং অফিসগুলোকে কার্যকরী করার জন্য প্রতিটি অফিসে একজন সহকারী জজ পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পদায়ন করাসহ প্রতিটি অফিসে ৩ জন করে কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ এর অধীনে প্রণীত আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা ২০১১ অনুযায়ী নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ সরকারের নিকট হতে কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক ৭৫,০০০ টাকার উর্দ্ধে আয় করতে অক্ষম মুক্তিযোদ্ধা ও  বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন ব্যক্তি আইনগত সহায়তা পাওয়ার অধিকারী। তাছাড়া, ভিজিডি কার্ডধারী দুঃস্থ মাতা ও পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত নারী বা শিশু এবং দুর্বৃত্ত দ্বারা এসিড দগ্ধ নারী বা শিশু আইনের অধিনে আইনগত সহায়তা পেতে পারেন। পাশাপাশি, আদর্শ গ্রামে গৃহ বা ভুমি বরাদ্ধ প্রাপক কোন ব্যক্তি, অসচ্ছল বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও দুঃস্থ মহিলা ও  উপার্জনে অক্ষম এবং সহায় সম্বলহীন প্রতিবন্ধি ব্যক্তিও এ আইনের অধীনে সুবিধাভোগী।

তাছাড়া,  আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্বপক্ষ সমর্থন করতে অসমর্থ ব্যক্তি, বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্বপক্ষ সমর্থন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি এবং জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে সুপারিশকৃত কোন ব্যক্তিও আইনের অধীনে আইনগত সহায়তা পাওয়ার অধিকারী। সর্বোপরি আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন, নানাবিধ আর্থ-সামাজিক এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অসচ্ছলতার কারণে স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার মামলা পরিচালনায় অসমর্থ ব্যক্তিগণ আইনগত সহায়তা পাবেন।

আইন সহায়তা প্রাপ্তির যোগ্যতা সম্পন্ন যে কোন ব্যক্তি তার নাম, পুর্ন ঠিকানা এবং সহায়তা চাওয়ার কারণ উল্লেখ করে নির্ধারিত ফরমে বা সাদা কাগজে আবেদন করবেন। তবে যে বিষয়ে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে তা যদি সুপ্রীমকোর্টের কোন বিভাগে বিচারের বিষয় হলে তা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর সভাপতিত্বে গঠিত জাতীয় আইনগত সহায়তা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে।

অন্যান্য আদালতে বিচারের বিষয় হলে জেলা আইনগত সহায়তা কমিটি বরাবর সরাসরি জেলা ও দায়রা জজের সভাপতিত্বে গঠিত জেলা আইনগত সহায়তা কমিটির নিকট আবেদন করতে হবে। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে গঠিত উওপজেলা আইনগত সহায়তা কমিটি অথবা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে গঠিত ইউনিয়ন আইনগত সহায়তা কমিটি’র নিকটও আবেদন করতে পারবেন।

জেলা আইনগত সহায়তা কমিটি কারো আবেদন অগ্রাহ্য করলে বা বাতিল করলে সে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদনকারী জাতীয় আইনগত সহায়তা পরিচালনা বোর্ডের নিকট ৬০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন।
জনগনকে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ সম্পর্কে অবগত করতে এবং অসহায় বিচার প্রার্থিদের আইনগত সহায়তা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে গতবছরের ন্যায় এবছরও আজ ২৮ এপ্রিল সরকার “ গড়িবের মামলার খরচ বহন করে সরকার” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে জাঁকজমকপূর্ণভাবে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন করেছে। কিন্তু যাদের জন্য এ দিবস পালন আর এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে  তারা এ থেকে কতটুকু উপকৃত হয়েছে? যদি সহজ সরল হিসাবও করা হয় তবে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় খুব সামান্যই তাদের কাজে লেগেছে।

কারণ অধিকাংশ জনগণ এ আইন সম্পর্কে যতেষ্ঠ অবগত নন। আবার যারা এ আইন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখেন তারাও ধোঁয়াসে ধারণার কারণে এ আইনের অধীনে সহায়তা নেন না। এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে উপজেলা ও ইউনিয়নে যে আইনগত সহায়তা কমিটি আছে সে বিষয়ে যৎসামান্য মানুষই ওয়াকিবহাল। দুঃখের বিষয় কমিটির সদস্যবৃন্দও তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত নন। তাছাড়া, সহায়তা প্রাপ্তির জটিল ও সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া,  অপর্যাপ্ত সংখ্যক প্যানেল আইনজীবী এবং তাদের ফিসের পরিমান অল্প হওয়ায় মামলা পরিচালনায় অনাগ্রহ ইত্যাদি কারনে যতেষ্ট পরিমান অসহায় বিচারপ্রার্থী থাকা সত্বেও প্রতিবছর সরকার কর্তৃক বরাদ্ধকৃত অর্থের অনেকাংশ অব্যবহার্য থেকে যায়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১ অণুচ্ছেদে বর্নিত প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় আইন সহায়তা আইন ২০০০ বাস্তবায়নের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। এ লক্ষে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র সহ অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারনার মাধ্যমে জনসচেতনতা তেরি করতে হবে। আইন, বিধি অন্যান্য তথ্য সম্বলিত ক্ষুদ্র পুস্তিকা ইত্যাদি প্রকাশসহ সেমিনার, কর্মশালা ও জনচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ও ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে আইনগত অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা প্রদান জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে।

লেখক: তরুন ও উদীয়মান মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী; জাস্টিসমেকার্স ফেলো, সুইজারল্যান্ড; ইমেল: saikotbihr@gmail.com, ব্লগ: www.shahanur.blogspot.com

নিবন্ধটি নিম্নোক্ত নিউজ মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে:.












======================================================================  
Personal site of Advocate Shahanur Islam (an young, ascendant and promising human rights defender and lawyer) working for ensuring human rights, rule of law and social justice in Bangladesh and the Globe. কপিরাইট © অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত. সকল সত্ব ® সংরক্ষিত. শাহানূর ডট ব্লগস্পট ডট কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোন নিবন্ধ, মতামত, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ব্যতীত ব্যবহার আইনগত দণ্ডনীয়.