Saturday, January 18, 2014

শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান

অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকতসাম্প্রতিককালে সাভার, আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার ভবন ধস ও অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানীর ঘটনায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সমগ্র জাতি আজ সংকিত এবং উদ্বিগ্ন। যে শ্রমিকদের ঘামঝরা পরিশ্রমে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে দেশ সবচেয়ে বেশী বিদেশী মুদ্রা অর্জন করে অর্থনৈতিক চাকা সচল রেখেছে পোশাক
শিল্পের সেসব শ্রমিকদের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও দেশের আইন আদালত যেন নির্জীব। শ্রমিক নিয়োগ, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরীর হার নির্ধারণ, মজুরী পরিশোধ, কার্যকালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শ্রমিকের জখমের জন্য ক্ষতিপূরণ, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শিল্প বিরোধ উত্থাপন ও নিষ্পত্তি, শ্রমিকের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কল্যাণ ও চাকুরীর অবস্থা ও পরিবেশ এবং শিক্ষাধীনতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে সকল আইনের সংশোধন ও সংহতকরণকল্পে ২০০৬ সালে শ্রম আইন প্রনীত হয়। কিন্তু শ্রমিকের কল্যাণে এ আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে।

শ্রম আইন ২০০৬ এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের  ৬২ নং ধারায়  অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন বিষয়ে বলা হয়েছে যে, 

(১) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রত্যেক তলার সাথে সংযোগ রক্ষাকারী অন্ততঃ একটি বিকল্প সিঁড়িসহ বহির্গমনের উপায় এবং অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামের ব্যবস্থা করবে।

(২) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান বহির্গমনের পথ তালাবদ্ধ বা আটকিয়ে রাখবে না, যাতে কোন ব্যক্তি কক্ষের ভিতরে কর্মরত থাকলে উহা তত্ক্ষণাৎ ভিতর হতে সহজে খোলা যায়, এবং সকল দরজা এমনভাবে তৈরী করবে যেন উহা বাহিরের দিকে সহজে খোলা যায়, অথবা যদি কোন দরজা দুইটি কক্ষের মাঝখানে হয়, তবে উহা ভবনের নিকটতম বহির্গমন পথের কাছাকাছি দিকে খোলা যায়, এবং কোন দরজা কক্ষে কাজ চলাকালীন সময়ে তালাবদ্ধ বা বাধাগ্রস্থ অবস্থায় রাখতে পারবে না।

(৩) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান সাধারণ বহির্গমণের জন্য ব্যবহৃত পথ ব্যতীত অগ্নিকাণ্ড কালে বহির্গমনের জন্য ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত প্রত্যেক জানালা, দরজা বা অন্য কোন বহির্গমন পথ স্পষ্টভাবে লাল রং দ্বারা বাংলা অক্ষরে অথবা অন্য কোন সহজবোধ্য প্রকারে চিহ্নিত করবে।

(৪) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিককে অগ্নিকাণ্ডের বা বিপদের সময় তত্সম্পর্কে হুশিয়ার করার জন্য স্পষ্টভাবে শ্রবণযোগ্য হুশিয়ারী সংকেতের ব্যবস্থা করবে।

(৫) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কক্ষে কর্মরত শ্রমিকগণের অগ্নিকান্ডের সময় বিভিন্ন বহির্গমন পথে পৌঁছার সহায়ক একটি অবাধ পথের ব্যবস্থা রাখবে৷

(৬) যে প্রতিষ্ঠানের নীচ তলার উপরে কোন জায়গায় সাধারণভাবে দশজন বা ততোধিক শ্রমিক কর্মরত থাকেন, অথবা বিষ্ফোরক বা অতিদাহ্য পদার্থ ব্যবহৃত হয়, অথবা গুদামজাত করা হয়, সে প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ডকালে বহির্গমনের উপায় সম্পর্কে সকল শ্রমিকেরা যাতে সুপরিচিত থাকেন এবং উক্ত সময়ে তাদের কি কি করণীয় হবে, তত্সম্পর্কে তারা যাতে পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারেন সেই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

(৭) পঞ্চাশ বা ততধিক শ্রমিক/কর্মচারী সম্বলিত কারখানা ও প্রতিষ্ঠান প্রতি বত্সর অন্ততঃ একবার অগ্নিনির্বাপন মহড়ার আয়োজন করবে, এবং সে বিষয়ে মালিক কর্তৃক নির্ধারিত পন্থায় একটি রেকর্ড বুক সংরক্ষণ করবে।

চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ‍ঃ 

যদি কোন শ্রমিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে আহত বা নিহত হন তবে তাদের ক্ষতপূরণের বিধানসমুহ এই এই আইনের দ্বাদশ অধ্যায়ের বর্নিত হয়েছে ।  উক্ত আইন অনুযায়ী, কোন শ্রমিক আহত হয়ে চারদিন কাজ করতে না পারেন তবে তিনি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে ক্ষতিপুরণ পাবেন। আহত হওয়ার নোটিশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে 

মালিক নিজ খরচে আহত শ্রমিকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন, অন্যথায় চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করবেন। অত্র আইনের ১৫০ ধারায় বলা হয়েছে যে, চাকুরী চলাকালে দুর্ঘটনার ফলে যদি কোন শ্রমিক শরীরে জখমপ্রাপ্ত হন তাহলে মালিক তাকে এই অধ্যায়ের বিধান অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন।

১৫১ ধারায় বলা হয়েছে যে, যখমের ফলে মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট  শ্রমিক এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে। তাছাড়া জখমের ফলে স্থায়ী সম্পূর্ণ অক্ষমতা ঘটলে এবং সংশ্লিষ্ট শ্রমিকটি যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হন তবে তিনি এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা এবং সংশ্লিষ্ট শ্রমিকটি যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক হন তবে তিনি দশ হাজার টাকা ক্ষতিপুরণ পাবেন।

যদি চাকরীর চুক্তি পত্রে নাও থাকে তবু মালিক সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে অত্র আইনে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন।

বলবতকরণঃ 

উক্ত আইনের ১৬৬ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তির চিকৎসা বা ক্ষতিপূরণ পরিশোধের দায় সম্পর্কে যে কোন প্রশ্নের উদ্ভব হলে তা শ্রম আদালত নিষ্পত্তি করবে এবং  কোন দেওয়ানী আদালতের সে সম্পর্কে কোন দায় বলবৎ করার ব্যাপারে এখতিয়ার থাকবে না।

লেখক:মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী ও সাংবাদিক; প্রতিষ্ঠাতামহাসচিব, জাস্টিসমেকার্সবাংলাদেশ; মোবাইলঃ ০১৭২০৩০৮০৮০, ইমেল: saikotbihr@gmail.com, ব্লগ: www.shahanur.blogspot.com

নিবন্ধটি নিম্নোক্ত নিউজ মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে:

১। শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, UNSBD.Com, June 08, 2013

২। শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, BartaBangla.Com, June 09, 2013

৩। শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, UnitedNews24.Com, June 08, 2013

৪। শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, BanglaNews.Com.Bd, June 08, 2013

৫।শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, SatkhiraNews.Com, June 08, 2013

৬। শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, Gorai24.Com, June 08, 2013

৭। শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, Bangla-News24.Com, June 10, 2013

৮। শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, Bangla.Se, June 10, 2013

৯। শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, ABNews24.Com, June 09, 2013

১০। শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, 52Somachar.Com, June 11, 2013

১১। শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, Sangbad24.Com, June 08, 2013

১২। শ্রমিকের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিধান, NewsFromBangladesh, June 08, 2013

13. শ্রমকিরে নরিাপত্তা, চকিৎিসা ও ক্ষতপিূরণরে বধিান, PrimeNewsBD24.Com

14. শ্রমকিরে নরিাপত্তা, চকিৎিসা ও ক্ষতপিূরণরে বধিান, BanglaTimes.Com.Bd

======================================================================  
Advocate Shahanur Islam (an young, ascendant and promising human rights defender and lawyer) working for ensuring human rights, rule of law and social justice in Bangladesh and the Globe. কপিরাইট © অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত. সকল সত্ব ® সংরক্ষিত. শাহানূর ডট ব্লগস্পট ডট কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোন নিবন্ধ, মতামত, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ব্যতীত ব্যবহার আইনগত দণ্ডনীয়.