Saturday, November 22, 2014

নারীর প্রতি সহিংসতা: আইনের কার্যকর প্রয়োগ হতে পারে অন্যতম সমাধান

অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত: নারীর প্রতি সহিংসতা মানবাধিকারের অন্যতম লংঘন এবং একটি দেশের উন্নয়নে বড় বাঁধা। বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা খুবই উদ্বেকজনক এবং তা দিনে দিনে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। খুন, ধর্ষন, শ্লীনতাহানী, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ, যৌন হয়রানী, বাল্য বিবাহ, হিল্লা বিবাহ, ফতোয়ার
মত কাজ, যা নারীর দৈহিক বা মানসিক ক্ষতির কারণ হয়,অথবা সামাজিক ও ব্যক্তিজীবনে নারীর স্বাধীনতাকে হরণ করে- নারীর প্রতি এ ধরনের সহিংসতা বা নির্যাতনের বিষয়গুলো শুধু বাংলাদেশেই নয় সমগ্র বিশ্বে সুদুর অতীতকাল থেকেই চলে আসছে। সামাজিক প্রথা, ধর্মীয় সংস্কার ও রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও নারীরাই প্রথম ও অধিক মাত্রায় নির্যাতনের শিকার হয়। 


অতীতকাল থেকে চলে আসা নারী নির্যাতনের বিষয়গুলো সমগ্র বিশ্বের নারী সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তার প্রেক্ষিতে নারী নির্যাতন বন্ধ তথা নারীর নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবছর সমগ্র বিশ্বে ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত “আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ” উদযাপন করা হয়। এই পক্ষকালের মধ্যে ২৫ নভেম্বর “আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস”, ২৯ নভেম্বর “আন্তর্জাতিক নারী অধিকার সুরক্ষা দিবস” এবং ১০ ডিসেম্বর “বিশ্ব মানবাধিকার দিবস” অন্যতম।
 
নারীর প্রতি সহিংসতার ব্যপকতা অবলোকন করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিবেক সম্পন্ন জনগনের প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ ও দাবীর মুখে বাংলাদেশ সরকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (বিশেষ) আইন, ২০০০ সহ বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করেছে। তাছাড়া, নারীর প্রতি যৌন হয়রানী, গৃহকর্মীদের সুরক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ছাত্রীদের শারীরিক নির্যাতন বন্ধসহ অন্যান্য সহিংসতা প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্ট বেশ কিছু নীতিমালা প্রণয়নের দিক নির্দেশনা প্রদান করেছে
মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ গত ১৪ মে ২০০৯ তারিখে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের নীতিমালা সম্বলিত একটি যুগান্তরি রায় প্রদান করেন। তাছাড়া, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ হাইকোর্ট গৃহকর্মীদের সুরক্ষা বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান এবং ১৩ জানুয়ারি ২০১১ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক শাস্তি প্রদান প্রতিরোধে নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান করেন। এছাড়াও সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ গত ১২ মে ২০১১ তারিখে ফতোয়া সংক্রান্ত একটি যুগান্তরী রায় প্রদান করেন।
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আদালতের প্রদত্ত রায় মোতাবেক  প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একটি করে অভিযোগ বক্স থাকতে হবেঅভিযোগ গ্রহনের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করতে হবে যার বেশির ভাগ সদস্য হবেন নারী। এমনকি সম্ভব হলে এ কমিটির প্রধান হবেন একজন নারী। তাছাড়া, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান তার প্রতিষ্ঠানে সংঘঠিত যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।সর্বোপরি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। গৃহকর্মীদের সুরক্ষা বিষয়ক হাইকোর্টের প্রদত্ত রায় অনুযায়ী ১২ বছরের নীচে কোনো শিশুকে গৃহকর্মে নিয়োগ করা যাবে না। তাছাড়া, গৃহশ্রমিকদের নিবন্ধন করাসহ যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হাইকোর্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে।
কিন্তু চোখ খুললেই দেখা যায় নারী নির্যাতনের নিরোধে প্রণীত আইন এবং আদালতের প্রদত্ত নির্দেশনা ও নীতিমালাগুলো শুধু কাগজে কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, বাস্তবে তেমন কোনো প্রয়োগ নেই। এমনকি বাস্তবায়নের জন্য নেই যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থাএমন পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা হ্রাসের পরিবর্তে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে প্রস্তাবিত কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন এবং স্বাক্ষী সুরক্ষা আইন-এর খসড়াটিকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনে পরিণত দ্রত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।  একইসাথে সংশ্লিষ্ট প্রচলিত আইনগুলোর কার্যকর প্রয়োগ করতে হবে।
তাছাড়া, ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার ও ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (OCC) এর সেবা তৃনমূল পর্যায়ে সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি সমাজ সেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর সেবার মান ও সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এছাড়াও, মহামান্য আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা ২০১০ খসড়ার আলোকে একটি পূর্নাঙ্গ আইন প্রণয়ন করে কার্যকর প্রয়োগ প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে Corporal Punishment নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেও্য়া রায়, ফতোয়ার নামে বিচার বহির্ভূত শাস্তি প্রদান বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক রায় এবং পর্ণগ্রাফি প্রতিরোধে প্রনীত আইনসহ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
সর্বোপরি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে প্রনীত প্রচলিত আইনগুলোর কার্যকর প্রয়োগ, সুষ্ঠ বাস্তবায়ন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা আবশ্যক। পাশাপাশি, আমাদের সকলের সহযোগিতা নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে গুরত্ত্বপূর্ন অবদান রাখতে সক্ষম।
লেখক: মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী; জাস্টিসমেকার্স ফেলো, সুইজারল্যান্ড; একটি শিশুকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত; ইমেল: saikotbihr@gmail.com

নিবন্ধটি নিম্নোক্ত নিউজ মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে:





























 ১৬। নারীর প্রতি সহিংসতা : আইনের কার্যকর প্রয়োগ হতে পারে অন্যতম সমাধান, OpenNews23.Com, March 22, 2013

======================================================================  
Personal site of Advocate Shahanur Islam (an young, ascendant and promising human rights defender and lawyer) working for ensuring human rights, rule of law and social justice in Bangladesh and the Globe. কপিরাইট © অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত. সকল সত্ব ® সংরক্ষিত. শাহানূর ডট ব্লগস্পট ডট কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোন নিবন্ধ, মতামত, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ব্যতীত ব্যবহার আইনগত দণ্ডনীয়.