দি হেগ, নেদারল্যান্ডস, ০৮সেপ্টেম্বর, ২০১১
আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে ৭ আগস্ট ২০১১ ইং তারিখে পার্বত্য চট্রগ্রামে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের আনুমানিক ৯০০ জুম্মা ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনে ২২ ছাত্র আহত হয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসন বিক্ষোভকারী ছাত্রের উপর শারীরিকভাবে আক্রমণ এবং প্রহারের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছে।
জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচারডি), দি হেগ, নেদারল্যান্ড এর বাংলাদেশ অবজারভার এডভোকেট শাহানুর ইসলামের নেতত্বে পাঁচ সদস্যের এক তথ্যানুসন্ধান দল সম্প্রতি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নির্যাতিত ও চাক্ষুষ সাক্ষীদের সাথে কথা বলে তাদের বিবৃতি লিপিবদ্ধ করেন। জাস্টিসমেকারস বাংলাদেশ ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচারডি) ই প্রথম মানবাধিকার সংগঠন যারা ঘটনাটি সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধান করেন।
পুলিশ প্রশাসন ঘটনার দিন তাদের দ্বারা কৃত সব অপরাধ মূলক কাজ অস্বীকার করে বিক্ষোভকারিরা যদি আদিবাসিদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে ভবিষ্যতে আবার এই রকম বিক্ষোভ করমসুচি আয়োজন করে তবে ভবিষ্যতে পুলিশ প্রশাসনের নিকট থেকে খারাপ ব্যবহার এমনকি তাদের জীবন নষ্ট হতে পারে বলে হুমকি প্রদান করেন। পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কৃত সকল অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড অস্বীকার করায় এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা করা হইয় নি এবং ভবিষ্যতে কোন ব্যবস্থা করা হবে না।
ঘটনার দিন জুম্মা ছাত্ররা খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ গেট থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল সহযোগে সামনের চেঙ্গিস স্কয়ারের দিকে এগুতে থাকলে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট এবং কোতোয়ালি পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আনুমানিক ৬০ জন পুলিশ সদস্য কলেজ গেটের সামনে তাদেরকে বাঁধা প্রদান করেন। এসময় বিক্ষোভকারি ছাত্ররা সামনে এগুতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা কোন প্রকার উস্কানি ছাড়া হঠাৎ বিক্ষোভকারিদের উপর লাঠি চার্জ শুরু করে । এসময় পুলিশ সদস্যরা ছাত্রদের কিল, ঘুষি, লাথি এবং মেয়ে বিক্ষোভকারিদের টানা হিঁচড়া করতে থাকে। এতে ২২ জন জুম্মা ছাত্র আহত হয়, যাদের মধ্যে চার জন মারাত্বকভাবে আহত হন। পুলিশ সদস্য কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা সদস্যরা কলেজ প্রাঙ্গণ ঘিরে রাখে এবং ছাত্ররা বাড়ি ফিরে যাবার সময় এক ছাত্রকে ধরে উদ্দেশ্যমুলকভাবে অমানবিক নির্যাতন করে, ফলে সে মারাত্বকভাবে আহত হন।
ঘটনাটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং এই লজ্জাকর মানবাধিকার লঙ্ঘন বিনা প্রতিকারে সহ্য করা যায় না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার একটি অনস্বীকার্য মৌলিক মানবাধিকার এবং পুলিশ কর্তৃক উল্লেখিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে বাঁধা প্রদান ও বিক্ষোভকাররিদের নির্যাতন করা বাংলাদেশ সংবিধান ও বাংলাদেশ কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিসমূহের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। উপরোল্লিখিত ঘটনাটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আদিবাসীদের মৌলিক মানবাধিকার অর্জনের কণ্ঠস্বর চিরতরে স্তব্ধ করার দীর্ঘ পরিকল্পনা সফল করার একটি স্পষ্ট প্রয়াস মাত্র।
জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচআরডি) উপরোল্লিখিত মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনার দ্রুত সম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ী ব্যাক্তিদের বিরদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment